পুঁজিবাজার থেকে বিদেশিদের ৫১৫ কোটি টাকা প্রত্যাহার
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার থেকে বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশিদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, টানা তিন মাস ধরে বিদেশীরা যে পরিমান শেয়ার কিনেছেন, তার বিপরীতে বেশি শেয়ার বিক্রি করছেন। এ সময়ে পুঁজিবাজারে নিট বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে ৫১৫ কোটি টাকার।
ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে বিদেশীরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন বলে সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা গেছে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ ইতিবাচক থাকলেও চলতি বছরের শুরু থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয়। বিদেশীদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের ঘটনা গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই শুরু হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিট বিনিয়োগ কমে ৯৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। মার্চে নিট বিনিয়োগ কিছুটা বাড়লেও পরের মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে তা কমতে থাকে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বিদেশিরা যে পরিমান শেয়ার কিনেছেন তারচেয়ে ৫১৫ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার বিক্রি করেছের মে মাসে। এ সময় ২৮৩ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা। আর সদ্য শেষ হওয়া জুন মাসে তাদের নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহারের পরিমান ছিল ২০৭ কোটি টাকা। আর এপ্রিল মাসে ২৫ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয় তারা।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে বিদেশিরা ৪৪৬ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে ৬৫৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। আগের মাসে বিদেশিরা মোট ৯৬৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছেন, যার মধ্যে ৬২৪ কোটি টাকা ছিল শেয়ার বিক্রি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশিরা শেয়ার কিনেছেন ৩৯২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার। বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৪৮৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার। ফলে ফেব্রুয়ারিতে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ কমে ৯৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর জানুয়ারিতে বিদেশীরা শেয়ার কিনেছেন ৬৬৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকার।
এর বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৪৮০ কোটি ১৯ লাখ টাকার। এপ্রিলেও ক্রয়ের চেয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন বিদেশীরা। এ সময় ৫০৩ কোটি টাকা শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে ৫২৮ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন তারা।
এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমান বেড়েছে। তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় বিদেশীদের শেয়ার বিক্রির পরিমান বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদেশীদের মোট লেণদেনের পরিমান ছিল ১১ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। এটি ডিএসইর মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদেশিরা মোট ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করেন। এর বিপরীতে ৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশীদের মোট লেনদেনের পরিমান ছিল ১০ হাজার ৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে শেয়ার ক্রয় ছিল ৬ হাজার ১৩৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও শেয়ার বিক্রির পরিমান ছিল ৩ হাজার ৮০৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের মোট লেনদেনে শেয়ার ক্রয়ের পরিমান ছিল ৬১ শতাংশ ছিল। আর সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট লেনদেনে শেয়ার বিক্রির পরিমান দাঁড়ায় ৪৯ দশমিক ৬৮ শতাংশে।২০১৭ সাল শেষে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত ২০১০ সালে বিদেশিদের মোট লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, ২০১১ সালে ১ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা, ২০১২ সালে ২ হাজার ৩৫৫ কোটি, ২০১৩ সালে ২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৯০ লাখ, ২০১৪ সালে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ৯৪ লাখ, ২০১৫ সালে ৭ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা ছিল।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন বিদেশীরা। শুধুমাত্র রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নয় ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও বিদেশীদের শেয়ার বিক্রিতে প্রভাবিত করছে বলে মার্চেন্ট ব্যাংকররা জানিয়েছেন। গত তিন মাস ধরেই বিদেশীরা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পুঁজি প্রত্যাহার নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই লোকসানে শেয়ার বিক্রি করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।
দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ২০১৭ সালে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ ছিল উল্লেখ করা মতো। তাদের নিট বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা চলতি বছরের জানুয়ারিতেও অব্যাহত ছিল। তবে বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অগ্রীম আমানত অনুপাত (্এডিআর) কমানোকে কেন্দ্র করে গত এক মাস ধরে যে অস্থিরতা তৈরী হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে পুরো পুঁজিবাজারের লেনদেনে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদেশীরাও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন
ফলে বাজার পরিস্থিতিতে অস্থিরতা তৈরী হয়েছে। দেশের সাধারন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশিদের মধ্যেও আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতার শঙ্কায় পেয়ে বসেছে। এতে তাদের মধ্যেও ভীতি তৈরী হওয়ায় শেয়ার বিক্রি বাড়ছে।