দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে গোপনে শেয়ার বিক্রয়কারী উদ্যোক্তা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর নির্দেশে এই বিষয়ে একটি সফটওয়্যারের মডিউল তৈরির কাজ শুরু করেছে সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।

যাতে গোপনে শেয়ার বিক্রয় করা পরিচালকরা আর কোনও ঘোষণা ছাড়া এখন থেকে শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। তাই এসব অনিয়ম রোধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে পুঁজিবাজারের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, উদ্যোক্তা পরিচালকদের কোনও ধরনের ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রিতে পুঁজিবাজারের নেতিবাচক প্রভাব পরার পাশাপাশি রাজস্ব বঞ্চিত হতো সরকার। যেটা সিকিউরিটিজ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই যেসব কোম্পানির পরিচালকদের বিরুদ্ধে গোপনে শেয়ার বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাদের নজরদারির আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিডিবিএল। প্রতিটি কোম্পানির স্পন্সর পরিচালক এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরের আগে বাধ্যতামূলক ঘোষণা দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে সিডিবিএলের প্রতি বিএসইসির কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

গত বছরের আগষ্টে একটি বীমা কোম্পানির পরিচালকদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ঘোষণা ছাড়া দেশের প্রভাবশালী একটি গ্রুপের কাছে শেয়ার বিক্রির অভিযোগ উঠে। এতেই নড়েচড়ে বসে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এরই প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেয় এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রি এটি সিকিউরিটিজ আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে এমন কিছু তথ্য এরইমধ্যে বিএসইসির নজরদারিতে এসেছে। বিএসইসি এসব অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। যদি তালিকাভুক্ত কোনও কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রি করে তাহলে এটি পুরো বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এমনকি সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ স্পন্সর-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ওপর সরকারকে ৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রদান করতে হয়। প্রতি মাসের শেষে কোম্পানিগুলোর স্পন্সর-পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারধারণের সর্বশেষ আপডেট জানা যাবে।

সিডিবিএল সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রয়কারী পরিচালকদের বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। তাদের জন্য সফটওয়্যারে এমন একটি মডিউল তৈরি করা হচ্ছে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোনও স্পন্সর-পরিচালক, প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার তাদের শেয়ার ঘোষণা ছাড়া হস্তান্তর করতে পারবেন না।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) সিডিবিএলের এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্পন্সর পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর তিন বছরের লকইন থাকে। লকইনের সময় শেষ হওয়ার পর স্টক এক্সচেঞ্জে ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে তারা শেয়ার হস্তান্তর করতে পারে।

লিস্টিং রেগুলেশনের ৩৪ ধারা বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রত্যেক স্পন্সর অথবা পরিচালক অথবা প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার তাদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় অথবা নিষ্পত্তি করতে একসঙ্গে কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জে ঘোষণাপত্রের সঙ্গে লিখিত রিপোর্ট প্রদান করবে। সেই সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেডিং আওয়ারে উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তরের ঘোষণাপত্র প্রচার করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ আরও আগে নেয়া উচিত ছিলো বিএসইসির। তবে আশার বিষয় হলো শেষ সময়ে এসে বিএসইসি এই ধরনের একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আগে উদ্যেক্তারা ঘোষণা ছাড়া রাতারাতি মুনাফা নিয়ে বাজার ছেড়েছেন। এদের নজরদারির আওতায় নিয়ে আসলে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।