এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : নীতিমালা না থাকায় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন বিএসসি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে চলছে প্রতিযোগিতা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুঁজি বাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। একটি কোম্পানির কি পরিমাণ অর্থ রিজার্ভ থাকবে তার সীমা না থাকায় রিজার্ভের পাহাড় গড়ছে। কোম্পানিটির পর্যাপ্ত পরিমাণ মুনাফা করলেও তা যথাযথভাবে বণ্টন না করে রিজার্ভের নামে সংরক্ষণ করছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন বঞ্চিত, আর পরিচালকরা এক পর্যায়ে সে রিজার্ভের মালিক হচ্ছেন। কোনো কোম্পানির রিজার্ভ যদি পর্যাপ্ত না হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পেতে বিপাকে পড়তে হয় সে কোম্পানিকে। আবার কোম্পানির অর্জিত মুনাফা থেকে লভ্যাংশ না বাড়িয়ে রিজার্ভ বাড়ালে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হন বিনিয়োগকারীরা। তবে রিজার্ভের স্ফীতি বিনিয়োগকারীদের জন্য কতটা লাভজনক নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মতভেদ থাকলেও পুঁজিবাজারে চলছে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে রিজার্ভ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা।

তাদের মতে, রিজার্ভের টাকা বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির আস্থার হাতিয়ার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ মুনাফা করলেও তা যথাযথভাবে বণ্টন না করে রিজার্ভের নামে সংরক্ষণ করছে।

ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন বঞ্চিত, আর পরিচালকরা এক পর্যায়ে সে রিজার্ভের মালিক হচ্ছেন। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ঘোষণানুযায়ী কোম্পানিটি সমাপ্ত বছরের অর্জিত মুনাফার ২৮ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বন্টন করবে। বাদ বাকি ৭২ শতাংশ রিজার্ভে সংরক্ষণ করবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে

জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন। অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ১ টাকা মুনাফা পাবে বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এসময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩.৬২ টাকা। অর্থাৎ মুনাফার মাত্র ২৮ শতাংশ বন্টন করবে কোম্পানিটি। শেয়ার সংখ্যার সে হারে সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা বন্টন করা হবে। অর্থাৎ মুনাফার ৩৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা রিজার্ভে যোগ হবে। ৩০ জুন ২০১৮ শেষে কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত আয় বা রির্জাভ স্থিতি ছিল ২০০ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে বিএসসি’র মুনাফার ব্যাপক উল্লম্ফন হয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিক ৩১ মার্চ ২০১৯ শেষে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছিল ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ১.৭৬ টাকা। কিন্তু বছরান্তে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩.৬২ টাকা। অর্থাৎ বছরের শেষ তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১.৮৬ টাকা। এক্ষেত্রে শেষ প্রান্তিকের অবদান ৫১ শতাংশ। আর বাকি ৪৯ শতাংশ এসেছে আগের ৩টি প্রান্তিকের সমন্বয়ে। ৩০ জুন ২০১৯ শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৫৬.৯৫ টাকা। যা আগের বছরের একই সময় ছিল ৫৩.৬১ টাকা।

এদিকে, সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি কার্যকরী নগদ প্রবাহ হয়েছে ৪.৮০ টাকা। যা আগের বছরের একই সময় ছিল ১.৪৫ টাকা। কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ১ হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৫২ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির আওতাধীন কোম্পানিটি ৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরে ৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করেছিল।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কোম্পানিটি ধারাবাহিক মুনাফা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে ধরে কোম্পানিটির মুনাফা ধারাবাহিক বাড়লেও সে হারে ডিভিডেন্ড বাড়েনি। এর মধ্যে কোম্পানিটি ২০১৫ সালে মুনাফা করে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৯২ পয়সা এবং কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য ছিল ৬০২ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৬ সালে মুনাফা করে ৬ কোটি ৭২ লাখ ৩ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৪৯ পয়সা এবং সম্পদমূল্য ৬০ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৭ সালে মুনাফা করে ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৬২ পয়সা এবং কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য ছিল ৫২ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে মুনাফা করে ১২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৮২ পয়সা এবং সম্পদমূল্য ৫৩ টাকা।