দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে তুমুল বিতর্কের প্রেক্ষিতে ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন আটকে গেছে। মাত্র ছয় লাখ টাকা দিয়েই ব্রোকারেজ হাউজের মালিক হওয়ার সুযোগ রেখে এ খসড়া বিধিমালা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এখন ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালার খসড় আবার জনমত জরিপে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বুধবার (২৯ এপ্রিল) বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৭২৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সভা শেষে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান জানান, ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা-২০২০ এর খসড়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে গেজেটে প্রকাশ সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে জনমত জরিপের সময় শেষ হয়েছে। এজন্য কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে পরবর্তীতে অফিস খোলার পর এ জনমত জরিপের নতুন সময় সীমা নির্ধারণ করা হবে।

এর আগে গত ২৪ মার্চ ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০’ খসড়া করে তা জনমত যাচাইয়ের জন্য মতামত চায় বিএসইসি। এ খসড়া চূড়ান্ত করতে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়। মতামতে খসড়ার কোনো বিষয়ে আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির খসড়াই বলা হয়েছে, এক্সচেঞ্জের প্রত্যেক প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডার ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের আওতায় একটি করে ট্রেক (ব্রোকারেজ হাউজ) পাওয়ার অধিকার রাখেন।

প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারদের বাহিরে ট্রেক পাওয়ার যোগ্যতার শর্তে রাখা হয়েছে- কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশন থেকে অনুমোদন যেসব প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূল্যধন তিন কোটি টাকা বা তার বেশি রয়েছে তারা ট্রেক পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে নীট সম্পদের পরিমাণ সব সময় পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি থাকতে হবে।

ট্রেক পাওয়ার জন্য এক লাখ টাকা ফি দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এই ফি ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ বরাবর জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর তা যাচাইবাছাই করে এক্সচেঞ্জ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা মঞ্জুর করবে অথবা বাতিল করবে। আবেদন মঞ্জুর হলে নিবন্ধন ফি বাবদ পাঁচ লাখ টাকা এক্সচেঞ্জ বরাবর ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার করতে হবে। অর্থাৎ মাত্র ছয় লাখ টাকা দিয়েই হওয়া যাবে ব্রোকারেজ হাউজের মালিক।

কোনো প্রতিষ্ঠান ট্রেক পেলে তা হস্তান্তর করা যাবে না। আবার নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুযায়ী স্টক-ডিলার বা স্টক-ব্রোকারের সনদ নিতে হবে। এ সনদ নেয়ার ছয় মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না পারলে ট্রেক বাতিল হয়ে যাবে।

এরপর এ বিধিমালা নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যদের বড় অংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১২ এপ্রিল ডিএসই চেয়ারম্যান, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), সকল শেয়ারহোল্ডার ও স্বাধীন পরিচালক এবং কোম্পানি সচিব বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠায় ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)।

নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে বিএসইসির খসড়ার বিষয়ে আপত্তি জানাতে বলা হয়েছে। তা না করলে অতিরিক্ত সাধারণ সভা (ইজিএম) করে ডিএসইর সব পরিচালককে অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে নোটিশে হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।

আইনজীবী আহসানুল করিমের মাধ্যমে পাঠানো আইনি নোটিশে বলা হয়, ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালার বিষয়ে বিএসইসি যে খসড়া করেছে, তা আইন সঙ্গত হয়নি। এ ধরনের বিধিমালা করার আইনগত কোনো অধিকার নেই বিএসইসির।