দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ও চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী ৪ মে মেয়াদ শেষ হচ্ছে কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীর। তিনিও তার পুরনো কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাবেন। তার পরের সপ্তাহে বিদায় নিবেন চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চার কমিশনার পদের মধ্যে দু’টিই বর্তমানে খালি রয়েছে। আগামী ৪ মে আরেক কমিশনারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে দু’দিনের মধ্যে নতুন কাউকে নিয়োগ না দিলে কোরাম সংকটে পড়বে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে বিএসইসির পক্ষে জরুরি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে না।

২০১০ সালের মহাধসের পর তদন্ত কমিটির সুপারিশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পুনর্গঠন করে সরকার। এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নামও পালটে যায়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) থেকে সংস্থাটির নাম বদলে হয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

নাম বদলের আগে থেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানের অধ্যাপক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কমিশনের দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী।

পুনর্গঠিত বিএসইসিতে এই দু’জনের সঙ্গে দায়িত্ব পান মো আরিফ খান। একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়ে পুনর্গঠিত বিএসইসি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লে এক পর্যায়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিএসইসির কমিশনারের পদ ছেড়ে দেন আরিফ খান। তবে কিছুদিনের মধ্যে তিনি আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে যোগ দেন।

দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন, প্লেসমেন্ট অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে বিএসইসির সমালোচনা হলেও পদ আকড়ে ধরে রাখেন চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন ও কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী। এমনকি বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাদের পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করা হলেও আইন লঙ্ঘন করে এ দু’জনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

তবে নতুন মেয়াদেও বিতর্ক তাদের পিছু ছাড়েনি। আগের মতোই দুর্বল কোম্পানি অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাদের সঙ্গে নিয়োগ পাওয়া এক কমিশনারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ারও অভিযোগ আছে।

দীর্ঘদিন ধরে বিএসইসির কমিশনারের পদ আকড়ে ধরে রাখা হেলাল উদ্দিন নিজামীর মেয়াদ আগামী ৪ মে শেষ হচ্ছে। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল বিএসইসির কমিশনারের পদ থেকে বিদায় নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা। চার কমিশনার পদের মধ্যে একটি পদ আগে থেকে খালি রয়েছে।

ফলে হেলাল উদ্দিন নিজামী বিদায় নিলে চার কমিশনারের মধ্যে তিনটি পদই খালি হয়ে যাবে। তখন বিএসইসির পক্ষে কমিশন সভা করা সম্ভব হবে না এবং জরুরি কোন সিদ্ধান্ত নেয়াও সম্ভব হবে না।

অপরদিকে আগামী ১৪ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে এ সময়ের মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেয়া হলে কমিশনারদের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের পদও খালি পড়ে থাকবে। তখন শুধু একজন কমিশনার দিয়ে চলবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এদিকে করোনা প্রকোপের আগে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন- তা নিয় বেশ শোরগোল শুরু হয়। সে সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে অবসরে যাওয়া সচিব মনোয়ার আহমেদ, বিদায়ের পথে থাকা বিএসইসির কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী এবং বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়।

তবে করোনা প্রকোপের মধ্যে এ গুঞ্জনও স্থবির হয়ে পড়েছে। ভেতরে ভেতরে এই তিনজনসহ আরও কয়েকজন চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।