দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের সংকটজনক পরিস্থিতিতে বেশ কিছু সংস্থার মালিকদের সন্ধান মিলল, যাঁদের কাছে লাভের আগে অনেক জরুরি সহানুভূতি। নিজেরা ১ টাকাও বেতন নিচ্ছেন না। কিন্তু কর্মীদের চাকরিটা বাঁচিয়ে রাখছেন। পাশাপাশিই কর্মীদের বেতনে এক ফোটাও কাঁচি চালাচ্ছেন না। সেই সব স্টার্ট-আপগুলির সিইওরা কী ভাবে এই সংকটজনক পরিস্থিতির সামাল দিচ্ছেন তাই একনজরে দেখে নেওয়া যাক।

COVID-19 সংক্রমণকালে একঘরে প্রায় গোটা দুনিয়া। ভারতের মতোই বিশ্বের বহু দেশে এই মুহূর্তে চলছে লকডাউন। এমত অবস্থায় দেশগুলির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রবল ধাক্কা খাওয়ার মুখে। লকডাউন একবার উঠলে অপেক্ষায় রয়েছে কঠিন পরিস্থিতি। দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে বহু সংস্থাতেই কর্মীরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম (Work From Home) করছেন।

আবার অনেক সংস্থাই কর্মীদের মাসিক বেতনের অল্প টাকা কেটে নিয়ে, তাঁদের বাড়িতে বসিয়ে রেখেই বেতন দিচ্ছেন। তবে সবথেকে বিপজ্জনক দিক হচ্ছে, ইতিমধ্যেই দেশের নানান সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এমনই সংকটজনক পরিস্থিতিতে বেশ কিছু সংস্থার মালিকদের সন্ধান মিলল, যাঁদের কাছে লাভের আগে অনেক জরুরি সহানুভূতি।

নিজেরা ১ টাকাও বেতন নিচ্ছেন না। কিন্তু কর্মীদের চাকরিটা বাঁচিয়ে রাখছেন। পাশাপাশিই কর্মীদের বেতনে এক ফোটাও কাঁচি চালাচ্ছেন না। সেই সব সংস্থাগুলির CEO-রা কী ভাবে এই সংকটজনক পরিস্থিতির সামাল দিচ্ছেন তাই একনজরে দেখে নেওয়া যাক।

ভবিশ আগরওয়াল (ওলা ক্যাবস) : দেশের নিজস্ব ক্যাব সার্ভিস ওলা ক্যাবসের সিইও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা ভবিশ আগরওয়াল (Ola Cabs’ CEO and co-founder Bhavish Aggarwal) আগেই ঘোষণা করেছেন যে, চলতি আর্থিক বর্ষে তিনি কোনও বেতন নেবেন না। পাশাপাশিই তিনি আরও জানিয়েছেন যে, যে বেতন তিনি নিচ্ছেন না, তা চলে যাবে ওলার ‘ড্রাইভ দ্য ড্রাইভার ফান্ড’-এ।

এই ‘ড্রাইভ দ্য ড্রাইভার ফান্ড’ (‘Drive the Driver Fund’) আদতে ওলার সঙ্গে যুক্ত যত অটো, ক্যাব, বাইক, ট্যাক্সি ড্রাইভাররা রয়েছেন– তাঁদের স্বার্থেই। দিনরাত এক করে মানুষকে পরিষেবা দিতে ওলার যে সমস্ত ড্রাইভাররা কাজ করে চলেছেন, তাঁদের আর্থিক সংকট মেটানোই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এখনও পর্যন্ত ভবিশ নিজে এবং তাঁর সংস্থার অন্যান্য কর্মীরাও এই ‘ড্রাইভ দ্য ড্রাইভার ফান্ড’-এ ২০ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন।

​বিজয় শেখর শর্মা (পেটিএম) : সেই যখন থেকে করোনাভাইরাস এই দেশে হানা দিয়েছে, তখন থেকেই কর্মীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে অতিসতর্কতা দেখিয়েছেন মোবাইল পেমেন্ট অ্যাপস পেটিএম-এর প্রতিষ্ঠাতা বিজয় শেখর শর্মা (Paytm Founder Vijay Shekhar Sharma)। দেশের প্রথম কয়েকটি সংস্থার মালিক যাঁরা নিজেদের কর্মীদের ভবিতব্যের কথা চিন্তা করে আগেভাগেই নিজেরা এক পয়সাও বেতন নেবে না বলে ঠিক করেছেন, পেটিএম কর্ণধার বিজয় শেখর শর্মা তাঁদেরই একজন।

গত মাসের শেষ দিকে নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে বিজয় ঘোষণা করেন যে, পরবর্তী দুই মাসের জন্য তিনি কোনও বেতন নেবেন না। আর তাঁর এই বেতনের অর্থের পুরোটাই চলে যাবে তাঁর কর্মীদের কাছে, যাঁরা COVID-19 আক্রান্ত বা লকডাউনের কারণে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

​রিতেশ আগরওয়াল (ওয়ো হোটেলস অ্যান্ড হোমস): ওয়ো (OYO)-র তরফে একটি অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় যে, COVID-19 সংক্রমণকালে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রিতেশ আগরওয়াল (OYO Founder and CEO Ritesh Agarwal) চলতি আর্থিকবর্ষে এক টাকাও বেতন নেবেন না। অর্থাৎ ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে পরের বছর ২০২১-এর এপ্রিল অবধি ওয়োর কর্ণধার রিতেশ নিজের বেতন বাবদ পকেটে নিয়ে যাচ্ছেন ‘শূন্য’ টাকা।

তবে শুধু রিতেশ একাই নন। সংস্থার আরও বেশ কিছু ওপরতলার কর্মীরা রিতেশের মতোই এমরকম বেতন না নেওয়ার সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কেউ দুই মাসের, কেউ আবার ছয় মাসের জন্য বেতন নেবেন না। আর এমনতর ত্যাগের পুরোটাই সংস্থার কর্মীদের কথা চিন্তা করে।

​দীপ কালরা (মেক মাই ট্রিপ): অনলাইন ট্রাভেল সার্ভিস প্রোভাইডার মেক মাই ট্রিপ-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও দীপ কালরাও (MakeMyTrip’s CEO and Founder Deep Kalra) COVID-19 সংক্রমণকালে এক পয়সাও বেতন না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তিনিও সদর্পে ঘোষণা করেছেন যে, সংস্থার তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে ত্রাণ তহবিল তুলে দেওয়া হবে, সেখানেই যাবে তাঁর বেতন। পাশাপাশিই তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, সংস্থার কোনও কর্মী ছাঁটাই হবে না। ইতিমধ্যেই লকডাউনে বিপন্ন তাঁরই সংস্থার কর্মীদেরও অর্থ সাহায্য করেছেন তিনি।

​রাজীব বাজাজ (বাজাজ অটো) : বাজাজ অটো-র সিইও রাজীব বাজাজ (Bajaj Auto CEO Rajiv Bajaj) জানিয়েছেন যে, লকডাউন একবার উঠে গেলে তিনি এবং সংস্থার অন্য উচ্চপদস্থ কর্মীরা কোনও বেতন নেবেন না। সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, পুরো ১০০ শতাংশ বেতনই নেবেন না রাজীব।

পাশাপাশিই এই গভীর সংকটজনক পরিস্থিতিতে সমাজের এবং দেশের পাশে দাঁড়াতে অন্যান্য কর্মীদেরও বেতন কমানোর আর্জি জানিয়েছেন বাজাজের কর্ণধার। কিছু দিন আগেই একটি সংবাদমাধ্যম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজীব বলেছিলেন, ‘অন্য কর্মীদের বেতন হ্রাসের আগে, নিজের ১০০ শতাংশ বেতন কাটতে চাই।’

​উদয় কোটাক (কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক) : এই তালিকার এক্কেবারে প্রথমেই নাম থাকা উচিত মিস্টার কোটাকের। কিন্তু তা আমরা করতে পারিনি। কারণ, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংকের সিইও উদয় কোটাক (Kotak Mahindra Bank founder and CEO Uday Kotak) প্রতি মাসে মাত্র ১ টাকা করে বেতন নেবেন।

চলতি মাসের শুরুতেই একটি অফিসিয়াল বিবৃতি জারি করে মিস্টার কোটাক জানিয়েছিলেন যে, এই আর্থিকবর্ষে বেতনের মাত্র ১ টাকা করে তিনি নেবেন। আর কর্মীদের যাতে অসুবিধা না হয় বা তাঁদের যাতে ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন না হতে হয়, তা নিশ্চিত করতে তাঁর বেতনের ১ টাকা বাদে বাকি টাকা চলে যাবে সংস্থার ফান্ডে। শুধু তাই নয়। ব্যক্তিগত ভাবে উদয় কোটাক প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ২৫ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন।