ডিএসই ইতিহাসে সবচেয়ে কম প্রিমিয়াম পেল ডেল্টা হসপিটাল
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে ইতিহাসে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম প্রিমিয়াম পেয়েছে ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেড। শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকার সঙ্গে মাত্র ১ টাকা প্রিমিয়ামে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে। কাট-অফ প্রাইস থেকে আবার ১০ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে ডেল্টা হসপিটালকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ইস্যু করতে হবে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা গত ১০ বছরের আইপিও পর্যালোচনা করে এমন তথ্য মিলেছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সম্মতি পাওয়ার পর গত ২২ মার্চ বিকেল ৫টা থেকে ডেল্টা হসপিটালের শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে বিডিং বা নিলাম হয়, যা ২৫ মার্চ বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২৬ মার্চ থেকে করোনাভাইরাসে সরকারি সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ হয়ে গেলে ডেল্টা হসপিটালের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ স্থগিত হয়ে যায়। ৬৬ দিন পর স্টক এক্সচেঞ্জ চালু হলে গতকাল কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস ১১ টাকা নির্ধারণ হয়।
আরও পড়ুন…….
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে জনতা ও সিটি ব্যাংক
বুক বিল্ডিং নিলামের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কারণেই দেশের ইতিহাসে ডেল্টা হসপিটালের এত কম প্রিমিয়াম পাওয়ার কারণ বলে জানিয়েছেন মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। আগে নিলামে বেশি দর প্রস্তাব করলেও কাট-অফ প্রাইসেই শেয়ার পেতেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বুক বিল্ডিং পদ্ধতির সংশোধনীর কারণে এখন কাট-অফ প্রাইসের চেয়ে বেশি দর প্রস্তাব করলেও সে দরেই শেয়ার নিতে হবে। এছাড়া আগে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ হলেও কম দরের প্রস্তাবকারী কাট-অফ প্রাইসে শেয়ার নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানের সংশোধিত আইনে তা রহিত করা হয়েছে।
এছাড়া নিলামে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সেকেন্ডারি মার্কেটে ন্যূনতম এক কোটি টাকা বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতাও কম প্রিমিয়ামের জন্য দায়ী বলে জানিয়েছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে বাজার পরিস্থিতির অবনতির কারণে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম বিনিয়োগ নেই।
ডেল্টা হসপিটালের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে মাত্র ৮৮টি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অংশ নেয়, যা বুক বিল্ডিংয়ের নিলামে সবচেয়ে কম। এর আগে সবচেয়ে কম প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অংশ নেয় ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির শেয়ারের নিলামে। এ কোম্পানির শেয়ারের নিলামে ৯৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বুক বিল্ডিংয়ের নিলামে সবচেয়ে বেশি ৬০০ বিনিয়োগকারী অংশ নেয় এডিএন টেলিকমের শেয়ারে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০ সালের পর গতকাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে প্রিমিয়াম পেতে মোট ১৩টি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে নিলামে অংশ নেয়। নিলামে নিবন্ধিত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অংশ নেয়। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নিলামে শেয়ারে সবচেয়ে বেশি প্রিমিয়াম পেয়েছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
চলতি বছর এ কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নিলামে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারে প্রিমিয়াম পেয়েছে ৩০৫ টাকা। এতে ওয়ালটনের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ হয়েছে ৩১৫ টাকা। ডেল্টা হসপিটালের আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সবচেয়ে কম প্রিমিয়াম পায় এডিএন টেলিকম। এ কোম্পানিটি ২০১৮ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নিলামে প্রতি শেয়ারে ২০ টাকা প্রিমিয়াম পায়। কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ হয় ৩০ টাকায়।
ডেল্টা হসপিটালের নিলাম পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিলামে সর্বোচ্চ থেকে কাট-অফ প্রাইস পর্যন্ত দর প্রস্তাবকারীরা তাদের প্রস্তাবিত দরে ৩১ কোটি ৫৪ লাখ ২৯ হাজার টাকার শেয়ার কিনবেন। আর কাট-অফ প্রাইস থেকে ১০ শতাংশ কম দরে বা প্রতিটি ১০ টাকা করে ১৮ কোটি ৪৫ লাখ ৭১ হাজার টাকার শেয়ার আইপিওতে ইস্যু করা হবে।
বিডিংয়ে ৮৮ জন বিডার সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১১ টাকার মধ্যে দর প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে ১৫ টাকা দরে সবচেয়ে বেশি ১৪ জন বিডার দর প্রস্তাব করেছেন। এরপর ১৪ টাকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করেছেন ১১ জন বিডার।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭১৮তম সভায় কোম্পানিটির বিডিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে, যা দিয়ে যন্ত্রপাতি ক্রয়, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করা হবে।
৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ) দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা ৮৪ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি নিট সম্পত্তি মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ব্যতীত) দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৬২ পয়সা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ১০ পয়সা।
কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং রেজিস্টার টু দ্য ইস্যুর দায়িত্বে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।