দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ভবিষ্যতের দিকে তাকালেও পুঁজিবাজারে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে টেকনোলজির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ৩টি কারনে টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত টেকনোলজি কাজের গতি বাড়িয়ে দেয় ও দ্বিতীয়ত ব্যয় কমায়। এ কারনে আমাদেরকে টেকনোলজির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে স্টেকহোল্ডারদেরকে সহজেই এক জায়গায় নিয়ে আসে। এসব কারনে টেকনোলজির ব্যবহারটা খুব দরকার।

রও পড়ুন..

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংস্কার প্রয়োজন : জাপানি রাষ্ট্রদূত

ডিএসইর ট্রেক ৫ কোটি টাকা, জামানত ৩ কোটি

মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।

শেখ সামসুদ্দিন বলেন, করোনা টেকনোলজির গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। আগেরকার তুলনায় ব্যাপকভাবে এর প্রয়োজনীয়তা ফুটিয়ে তুলেছে। এই করোনায় অনেক খাতের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু টেকনোলজি ক্রমানয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কারন যেকোন পরিস্থিতিতেই টেকনোলজি ব্যবহার করে সে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। আমাদের এখানেও করোনার মধ্যে টেকনোলজির অভাবে বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে। আমরা আমাদের মতো করে নির্দেশনা দিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, করোনা হওয়ার পরে বিএসইসি টেকনোলজি নির্ভর অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। যেগুলো প্রমাণ করে ডিজিটালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ খুব উপকারী। যেমন এজিএম, ইজিএম, বোর্ড মিটিং, রিপোর্টস জমা ইত্যাদি অনলাইনে করার ব্যবস্থা করেছি। এতে করে ব্যয় ও সময় লাঘব হয়েছে।

এই কমিশনার বলেন, বিএসইসির প্রাথমিক একটি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে শেয়ারবাজারকে কত বেশি মানুষের কাছে সহজ করা যায়। এজন্য স্টক এক্সচেঞ্জের প্রত্যেকটি কার্যাবলিকে ডিজিটালাইজড করা হবে। এ নিয়ে কমিশন কাজ করছে। এছাড়া আপনাদের কাছে যদি কোন পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমিশন গ্রহন করবে। অতএব ডিজিটালাইজেশনের যে গুরুত্ব আছে, এই কমিশন সেটা খুব সহজভাবেই বুঝে। এবং সহজেই সে বিষয়ে প্রমোট করতে চায়।

স্টক এক্সচেঞ্জের চাওয়ার আগেই কমিশন অনেক কিছু করে ফেলেছে বলে জানান শেখ সামসুদ্দিন। উদাহরন স্বরুপ তিনি বলেন, আমরা সফটওয়্যার ডেভোলপট করেছি। অন্যান্য আরও অনেক পরিকল্পনা আমাদের আছে। আমরা সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। এজন্য আমাদের নিজেদেরও টেকনিক্যাল লোকজন দরকার হচ্ছে।

সে কারনে আমরা একজন আন্তর্জাতিকমানের আইটি বিশেষজ্ঞকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য টেন্ডার দিয়েছি। আশা করছি ২-৩ মাসের মধ্যে এ ধরনের একজন কর্মকর্তাকে আমাদের মাঝে পাব। যিনি আমাদের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যার পরামর্শে শেয়ারবাজারকে ডিজিটালাইজডের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আমাদের সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে চায়। যা করলে দেশের মঙ্গল হবে। আমরাও তার একটি অংশ হিসেবে শেয়ারবাজারকে ডিজিটালাইজড করতে চাই।

অনেকেই ডিজিটালাইজড করা কঠিন কাজ মনে করে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা কিন্তু একেবারেই তা নয়। যেমন মোবাইল ফোন দেশে আসার সময় অনেকেই ভেবেছিল কম শিক্ষিত মানুষজন এটা ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। সেই প্রেক্ষাপট থেকে আমরা যদি মার্কেটটাকে ডিজিটালাইজড করতে পারি, সেটা অবশ্যই সবাই গ্রহন করবে। এর মাধ্যমে বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। এছাড়া ব্যয় কমে আসবে। আর মার্কেটটাও সেব জায়গায় পৌছে যাবে।

সবাইকে অনুরোধ করে তিনি বলেন, টেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা বা ঝুঁকি আছে। এই ঝুঁকিকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। কারন পুরো মার্কেটে টেকনোলজি আনার পরে যদি স্টেকহোল্ডারদের তা বোঝার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে স্বার্থক হবে না। তাই টেকনোলজিকে যেনো প্রয়োগ করতে পারি, সে দৃষ্টিকোন থেকে স্টেকহোল্ডারদের যে ধরনের ট্রেনিং দরকার, তা করানোর জন্য বিএসইসির মাধ্যম আছে। যেমন বিআইসিএম ও বিএএসএম অন্যতম। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের দুটি ট্রেনিং সেন্টার আছে।

তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশের ওয়েবসাইট নাই বা কাজ করে না। এছাড়া ওয়েবসাইট থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৭ শতাংশের সর্বশেষ আর্থিক হিসাব নেই। এটা খুবই আশ্চর্যজনক।

বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন-প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির প্রমুখ।