দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম: পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মালিকানা ছাড়ছেন উদ্যোক্তা পরিচালক মেজর (অব.) মান্নান। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য এবং তার মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান হাতে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রায় ৮০ লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকদিনের ব্যবধানে তিন দফায় মোট ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮২০টি শেয়ার ছাড়ার (বিক্রির) ঘোষণা দেয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর রিজার্ভের পরিমাণ ১১৪ কোটি আট লাখ টাকা। কোম্পানির মোট চার কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ১৪৪ শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৫৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং বাকি ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে।

এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক সানম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান। পাশাপাশি তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নানও একজন উদ্যোক্তা পরিচালক। এছাড়া তার মালিকানাধীন সানম্যান সোয়েটার লিমিটেড, সানপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, পেনিনসুলা গার্মেন্টস লিমিটেড, আলফা টেক্সটাইল লিমিটেড এবং পাইওনিয়ার ড্রেসেস লিমিটেড ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মালিকানায় রয়েছেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তিন দফা মেজর আব্দুল মান্নান ও তার সংশ্লিষ্টরা মোট ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮২০টি শেয়ার ছাড়ার (বিক্রির) ঘোষণা দেন। এর মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালক মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬৭ শেয়ার থেকে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।

অন্যদিকে কোম্পানিটির আরেক উদ্যোক্তা পরিচালক ও আব্দুল মান্নানের স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নানের ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯টি শেয়ার থেকে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। আর করপোরেট পরিচালক সানমন সোয়েটার্স লিমিটেডের কাছে বর্তমানে কোম্পানিটির ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪৯ শেয়ার থেকে তিন লাখ ৮০ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে, যা আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বর্তমান বাজারদরে সাধারণ মার্কেটে বিক্রি করবেন তারা।

এর আগে ৩১ আগস্ট মেজর মান্নানের মালিকানাধীন পেনিনসুলা গার্মেন্টস লিমিটেড নামে মোট পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৬২২টি শেয়ারের মধ্যে তিন লাখ ১০ হাজার ৭২২ শেয়ার বিক্রয় করার ঘোষণা দেন। একই সময়ে সানপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মোট পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৬৩৩টি শেয়ারের মধ্যে তিন লাখ ১০ হাজার ৭৩৩ শেয়ার বিক্রি করে এবং পাইওনিয়ার ড্রেসেস লিমিটেডের চার লাখ ১৩ হাজার ৯৮৫ শেয়ারের মধ্যে ৩৭ হাজার ৬৩৫ শেয়ার বিক্রি করে দেন।

এরপর ৫ সেপ্টেম্বর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে মেজর আব্দুল মান্নান এবং তার মালিকানাধীন সানম্যান সোয়েটার, সানপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ, পেনিনসুলা গার্মেন্টস, আলফা টেক্সটাইল এবং পাইওনিয়ার ড্রেসেসের মোট ৯ লাখ ৯১ হাজার ৭৩০টি শেয়ার স্থান্তান্তর করা হয়। যদিও বিমা কোম্পানিতে মেজর আব্দুল মান্নানের মোট শেয়ার সংখ্যা ২৮ লাখ ৭৪ হাজার, তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নানের ১৪ লাখ ৩৭ হাজার, সানম্যান সোয়েটারের ১৫ লাখ আট হাজার ৮৩৭টি, আলফা টেক্সটাইলের ১২ লাখ ৬০ হাজার ২০৯টি এবং পাইওনিয়ার ড্রেসেসের সাত লাখ ৯০ হাজার ৩৫৫টি রয়েছে। এছাড়া সানপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ ও পেনিনসুলা গার্মেন্টসের নামে শেয়ার রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ লাখ শেয়ার রয়েছে।

এ বিষয়ে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানির সচিব শামসুল আমিন বলেন, ‘আমাদের উদ্যোক্তা পরিচালক মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের হোল্ডিংয়ে থাকা শেয়ার সাম্প্রতিক সময়ে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৪ লাখ শেয়ার বিক্রিয়ের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ৯ লাখের বেশি শেয়ার শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে স্থানান্তর করেন। মূলত ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রয়োজন এসব শেয়ার বিক্রি করেন। তবে তার হোল্ডিংয়ে পুরো শেয়ার বিক্রি করবেন না। আর আইন অনুসারে তো দুই শতাংশ শেয়ার থাকলে পরিচালক পদে থাকতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জানার জন্য ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক এবং সানম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ব্যবহৃত সংযোগে সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, কোম্পানিটি ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আলোচিত সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে তিন টাকা ৩৫ পয়সা। আর ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৪৭ টাকা ৩৩ পয়সা।