দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি একটিভ ফাইন কেমিক্যালস বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করে পুঁজিবাজার থেকে শত কোটি টাকা লুটপাট করছে। এদিকে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হলে কোম্পানির পরিচালকরা আরাম আয়েশ জীবনপান করছেন। বিনিয়োগকারীদের টাকায় একটিভ ফাইন কেমিক্যালস ব্যবসা করলেও বিনিয়োগকারীদের সাথে লভ্যাংশের নামে প্রতারনা করছে। কোম্পানিটি ক্যাটাগরি ধরে রাখার জন্য নামমাত্র ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এছাড়া গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির ইপিএস ধারাবাহিক কমার কারণ কি এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একদিকে কোম্পানির ইপিএস কমছে, অন্যদিকে ডিভিডেন্ড কমছে। মালিকপক্ষ ব্যস্ত বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে বছরের পর বছর কোম্পানির টাকায় লুটপাট করা।

একটিভ ফাইন কেমিক্যাল লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য .৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ। শনিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৬ পয়সা। তথ্যমতে, ৩০ জুন, ২০২০ তারিখে সমাপ্ত সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান (EPS) হয়েছে ০.২৩ টাকা। আগের বছর ইপিএস হয়েছিল ২ টাকা ৯৭ পয়সা।

২০১৯ সালে একটিভ ফাইন সমাপ্ত অর্থবছরে ৭১ কোটি মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদের নামমাত্রা ২ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছিলো। অর্থাৎ ৭১ কোটি টাকা মুনাফা করলে বিনিয়োগকারীরা পায় ৫ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের টাকায় কোম্পানিগুলো ব্যবসায় করলেও বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করছে। এ কোম্পানির ইপিএস ও ডিভিডেন্ড ধারাবাহিক কমার কারন কি খতিয়ে দেখা উচিত। ঐ সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৯৭ পয়সা। তবে কোম্পানিটি গত ৩০ জুন, ২০২০ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে আরো দেখা যাচ্ছে, কোম্পানিটি ধারাবাহিক মুনাফা করছে। গত পাঁচ বছরে ধরে কোম্পানিটির মুনাফা বাড়লে হঠাৎ করে ব্যবসায় এমন কি ধ্বস নামছে। এর মধ্যে কোম্পানিটি ২০১৫ সালে মুনাফা করে ৪৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৭ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৬ সালে মুনাফা করে ৬৭ কোটি ৮১ লাখ ৭ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৫ টাকা ৫১ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৭ সালে মুনাফা করে ৫৫ কোটি ৩৮ লাখ ৯ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৪৬ পয়সা।

কোম্পানিটি ২০১৮ সালে মুনাফা করে ৮২ কোটি ৫৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৪ টাকা ১৩ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৯ সালে মুনাফা করে ৭১ কোটি টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ২ টাকা ৯৭ পয়সা। ২০১৮ সালে যে কোম্পানির ইপিএস ছিল ২ টাকা ৯৭ পয়সা। আর ২০২০ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ২৩ পয়সা। সে কোম্পানি ২০২১ সালে এসে ইপিএস দাঁড়ায় ১৬ পয়সা। কোম্পানির মুনাফা এত ধসের কারন কি! এমন প্রশ্ন লাখো বিনিয়োগকারীর।

এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারী আজমত উল্লাহ বলেন, পুঁজিবাজারে এমনই স্মরনকালের ধ্বসের ক্ষত শুকাতে পারেনি। তার উপর কোম্পানিটি লভ্যাংশের নামে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করছে।এর চেয়ে ব্যাংকে টাকা রাখলে অনেক ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব। এমন অবস্থায় একটিভ ফাইনের মতো একটি ভালো কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের সাথে বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড ও ইপিএস নিয়ে প্রতারনা করছে। কোম্পানিটি ধারাবাহিক মুনাফা ও ইপিএসে ধ্বস নামছে।

তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির প্রতি যদি আস্থা না থাকে তা হলে পুঁজিবাজারে কিসের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করবে। একটিভ ফাইন বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করছে। এ কোম্পানির এমডি থেকে পরিচালনা পর্যদের সকলের শাস্তি হওয়া উচিত।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, একটিভ ফাইনের মুনাফা ও ডিভিডেন্ড ধারাবাহিক কমার কারন কি তা খতিয়ে দেখখা উচিত। এসব প্রতারক পরিচালকদের শাস্তি দাবী নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজারের হবে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সেরা পুঁজিবাজার। কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ফ্রড (প্রতারক)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

পুঁজিবাজারে একটিভ ফাইনের লুটপাটের চিত্র ধারাবাহিক প্রতিবেদন আসছে ….