রাশিয়া ও ইউক্রেন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটছে কারা!
আবদুর রহমান ও তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে টালমাতাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ অবস্থা চলতে খাকলে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ফের বাজারবিমুখ হয়ে পড়বে। এছাড়া এর মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার খবরও বাংলাদেশ ব্যাংকের পুঁজিবাজার ইস্যুতে নেতিবাচক প্রজ্ঞাপনে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার খবরে বড় দরপতনের কারণ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
‘মনস্তাত্ত্বিক’ প্রভাবে বাজারে ক্রেতার সংকট দেখা দেয় এবং বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে। এতে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বড় দরপতন দেখলেন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে বড় দরপতন দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহের পতনে ১৬ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে ডিএসই। সেই সঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ।
এ অবস্থার কারণ কী জানতে চাইলে পুঁজিবাজারের অন্যতম প্রধান মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, অনেক দিন ধরেই পুঁজিবাজার ‘সাইড লাইন’ ধরে চলছিল, অর্থাৎ সূচক প্রায় একই জায়গায় ওঠানামা করছিল। বাজারে সুনির্দিষ্ট গতি নেই। বুধবার সূচক কিছুটা বাড়লেও আগের তিন দিনে বড় দরপতন হয়েছিল। এরই মধ্যে কিছু শেয়ারের দর কমায় সেসব শেয়ারে অনেকের বিনিয়োগ আটকে গিয়েছিল। এ কারণে দৈনিক লেনদেনও হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছিল।
সবটা মিলে দরপতনের আতঙ্ক অনেকের মধ্যে ভর করেছিল। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ লেগেছে’ এমন খবরটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পরই শেয়ারদর কমতে থাকে। বড় কয়েকটি শেয়ারের দরপতনে সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পরই অনেক শেয়ারই দর হারায়। শেষ পর্যন্ত পতন বড় আকার নিয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগ ইস্যুতে প্রজ্ঞাপন বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের সরাসরি কোনো প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে হয়ত তেমন নেই বলে তিনি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালর সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল আমীন দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার বড় ধরনের কোন অস্থিতিশীল হওয়ার কারণ নেই। তবে একটি গোষ্ঠী পুঁজিবাজার ইস্যুতে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। তাছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের কোন প্রভাব আমাদের পুঁজিবাজারে নেই। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের কোন প্রভাব আমাদের বাজারে কখনো পড়ে না।
সুতারাং আন্তজার্তিক বাজারের কোন ইস্যু আমাদের পুঁজিবাজারে কানেকশন না করাই ভাল। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আরো সচেতন হতে হবে। কোন গুজবে কান দেওয়া যাবে না। বাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিকে হবে। মুলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুঁজিবাজার ইস্যুতে নেতিবাচক প্রজ্ঞাপনে বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে।
ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রোনের কোন প্রভাব আমাদের পুঁজিবাজারে নেই। পুঁজিবাজার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগ ইস্যু সার্কুলারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাছাড়া পুঁজিবাজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন সার্কুলার দিতে হলে বিএসইসি ও ডিএসই সাথে পরামর্শ করে দিলে বাজারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্রুত সহযোগিতা প্রয়োজন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে পাঁচ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
এ হিসেবে টানা দুই সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমলো ১৬ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। একইভাবে বাজার মূলধন কমলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে যায়।