দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের ৫ কোম্পানি সমাপ্ত অর্থবছরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ব্যাংক খাতের ৩৩ কোম্পানির মধ্যে এবার ৩১ টি ব্যাংক স্টক ও ক্যাশ মিলে লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তবে ৫ টি ব্যাংক শুধু বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এছাড়া ২টি ব্যাংক নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। একটি হলো: ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।

বোনাস লভ্যাংশ কোম্পানিগুলো হচ্ছে: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও রূপালি ব্যাংক লিমিটেড। ফলে ব্যাংক খাতের ৫ কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণায় নিয়ম লংঘন করার কারণে কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় পড়তে হয়েছে।

সুত্রে জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য মোট ডিভিডেন্ডের অর্ধেক নগদ বা ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণার বিধান রয়েছে। অন্যথায় কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত করারোপের শাস্তির আওতায় পড়তে হবে। এই বিধানের পরেও ২০২১ সালের ব্যবসায় ৫ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। যাতে করে কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় পড়তে হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর পরিপত্র অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে বোনাস ডিভিডেন্ডের সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। যদি বোনাস ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের বেশি হয়, তাহলে পুরো বোনাস ডিভিডেন্ডের উপর ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর দিতে হবে। এই বিধান সত্ত্বেও ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ অর্থবছরের জন্য এই যাবত ডিভিডেন্ড ঘোষিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের শুধুমাত্র বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

কোম্পানি পাঁচটি শেয়ারহোল্ডারদের ৩৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ১৭ হাজার ৬১০ টাকার বোনাস শেয়ার দিয়েছে। বিধান অনুযায়ী, শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায় কোম্পানিগুলোকে ৩৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ১৭ হাজার ৬১০ টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে ৩৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ৭৬১ টাকার অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হচ্ছে।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে ইউসিবি ব্যাংক লিমিটেড। কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। সেই হিসাবে কোম্পানিটি ১২ কোটি ৭৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৫টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে।

বোনাস শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। কোম্পানিটি ১০ শতাংশ হারে বোনা শেয়ার করায় সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের অনুকূলে ৮ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৬টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংক আলোচ্য অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে। সেই হিসাবে কোম্পানিটি ৮ কোটি ৫০ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৮টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে। সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ওয়ান ব্যাংক ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। যে কারণে কোম্পানিটি ৪ কোটি ৬৭ লাখ ০২ হাজার ০২৩টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করবে।

সর্বশেষ রূপালী ব্যাংক ২ শতাংশ বোনাস শেয়ার হিসাবে ৯১ লাখ ১৭ হাজার ০৯৯টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করবে। বিধান অনুযায়ী, শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায় কোম্পানিগুলোকে ৩৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ১৭ হাজার ৬১০ টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে ৩৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ৭৬১ টাকার অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হবে।

এদিকে, বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিএমআরই (ব্যালেন্সিং, মডার্ণাইজেশন, রিহেবিলিটেশন ও এক্সপানশন), নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালন ও পূণ:বিনিয়োগের জন্য বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে। তবে বোনাস শেয়ার ইস্যুর আগে বিএসইসির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৩টি ব্যাংকের মধ্যে ১১টির লভ্যাংশ আগের বছরের চেয়ে গত বছর বেড়েছে। লভ্যাংশের পরিমাণ কমেছে ৬টি ব্যাংকের, আর অপরিবর্তিত ছিল ১৩টির। আর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় তথা ইপিএস বেড়েছে ২২টির। তার মানে এই ব্যাংকগুলোর মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। আর মুনাফা কমায় ইপিএস কমেছে ১০ ব্যাংকের।

এ ছাড়া আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। এমনিতেই ব্যাংকটির ইপিএস ঋণাত্মক ছিল। ২০২১ সালে এসে তা আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে বছর শেষে ব্যাংকগুলোর আয় বেড়েছে। এ জন্য তারা ভালো লভ্যাংশ দিতে পেরেছে বেশির ভাগ ব্যাংক।

২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে যে ১১টি ব্যাংক বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে সেগুলো হচ্ছে—দ্য সিটি, মার্কেন্টাইল, এনসিসি, এনআরবিসি, প্রিমিয়ার, প্রাইম, শাহজালাল, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, ট্রাস্ট ও উত্তরা ব্যাংক। এসব ব্যাংকের লভ্যাংশ আগের বছরের চেয়ে সর্বনিম্ন ১ থেকে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। নগদ ও বোনাস মিলিয়েই তাদের লভ্যাংশ বেড়েছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো সাধারণত আর্থিক বছর শেষে নগদ অথবা বোনাস আকারে কিংবা দুভাবেই লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকে। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্যাংকের মালিকানার সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা পরিচালকেরা এই লভ্যাংশ পান।