দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার ভয়াবহ বিপর্যয়ের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও বাজার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া ভয়াবহ বিপর্যয় ২০২২ সালেও কাটিয়ে উঠতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা। বরং গত ১২ বছরে বেশ কয়েকবার পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থেকে পুনরায় বড় ধরনের দরপতন ঘটে।

এতে করে বিনিয়োগকারীরা বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে এ আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করে বারবার প্রতারিত হয়েছেন। ফলে বাজারের প্রতি আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারন করছে। অন্যদিকে টানা দরপতন পুঁজিবাজারে দুর্বল শেয়ারের দৌরাত্ন কমছে না। যেসব কোম্পানির মৌলভিত্তি দুর্বল, শেয়ার সংখ্যা কম, আয় কম এবং ডিভিডেন্ডের রেকর্ড ভালো নয়, সেসব শেয়ার দর ক্রমেই বাড়তে থাকায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে করে বাজারের স্বাভাবিক গতি বার বার নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারনে এবারও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মন্দা বাজারে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি পাওয়া এবং ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর কমে যাওয়া স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। আর এ ধরণের শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি পেলে বাজারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। তাই এসব শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এদিকে আজ দরপতন পুঁজিবাজারে যখন ৯৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে, তখন দর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে মন্দ কোম্পানিগুলোর শেয়ার। সোমবার (১৮ জুলাই) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের দরের হার বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষ দশ অবস্থানে থাকা কোম্পানিগুলির বেশিরভাগই মন্দ বা দূর্বল মৌলের। বেক্সিমকো, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, রবির মতো কোম্পানির শেয়ার যখন ক্রেতা শূন্য তখন এসব কোম্পানিগুলো দর হার বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে।

ডিএসইতে দরের হার বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ০৯১ শতাংশ। অথচ গত কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের হাতে লভ্যাংশ হিসেবে লোকসান তুলে দিয়ে আসছে ব্যাংকটি।

তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। কিন্তু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূত্রমতে জানা যায় ২০১৩ সালের পর কোম্পানিটি আর কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের। উল্টো চলতি বছরের জুন মাসের ১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি (ইপিএস) ১২ টাকা ২০ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে।

২০১৬ সালে শেষবারের মতো লভ্যাংশ ঘোষণা দেয়া মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং রয়েছে এ তাল্লিকার তৃতীয় অবস্থানে। ডিএসই সূত্রে জানা যায় গত কয়েক বছরে কোন এজিএম করেনি কোম্পানিটি। সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

২.৭১ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধির পর এ তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ লিমিটেড। বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের লোকসান দেখিয়ে আসা সাভার রিফ্র্যাক্টরিজের শেয়ারের দাম সোমবার ২৩৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৫০ পয়সা বেড়ে ২৪৬ টাকা ২০ পয়সায় পৌছায়।

তালিকায় লিব্রা ইনফিউশন লিমিটেড রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। ডিএসইর তথ্যমতে সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা ১৬ টাকা ৭ পয়সা। গত বছর এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে ৩০ জুন, ২০১৯ তারিখে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মাত্র ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। এর পর থেকে প্রতি প্রান্তিকেই শেয়ার প্রতি লোকসান দেখিয়ে আসছে কোম্পানিটি।

তালিকায় অষ্টম অবস্থানে থাকা স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দর বেড়েছে ০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ১ টাকা ২ পয়সা। ২০২০ এবং ২০২১ সালে ১ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দেইয়া এই কোম্পানিটিও বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ সময় ধরে লোকসান দেখিয়ে আসছে।