সপ্তাহজুড়ে ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে ১৭২ কোম্পানির শেয়ার
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে ফ্লোর প্রাইসের কোম্পানির সংখ্যা। সম্প্রতি ধারাবাহিক পতনে পুঁজিবাজারের সূচক যখন ৬ হাজার পয়েন্ট ভেদ করে নিচে নেমে যায়, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) উপায়ন্তর না দেখে গত ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। সেদিন লেনদেন শেষে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক অবস্থান করছিল ৫ হাজার ৯৮০ পয়েন্টে।
দু’দিন বন্ধের পর গত ৩১ জুলাই তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডসহ ২০ খাতের ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসের তিলক মাথায় নিয়ে লেনদেন শুরু করে। সেদিন লেনদেন শেষে ৭৬টি প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে লেনদেন হয়।
পরের দিন সোমবার ফ্লোর প্রাইসের সংখ্যা আরও কমে ৫১টিতে নেমে আসে। তৃতীয় দিন ফ্লোর প্রাইসের কোম্পানি আরও কমে ৩৪টিতে স্থির হয়। এরপর সূচক মাঝেমধ্যে কিছু বিরতি দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ফ্লোর প্রাইসে প্রতিষ্ঠানের তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে।
ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর এ পর্যন্ত সাত সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এরমধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৮৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৬৪ পয়েন্টে। সূচকের এমন উত্থানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে। কিন্তু ফ্লোর প্রাইসে কোম্পানির মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হয়েছে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ফ্লোর প্রাইসের তালিকা লাফ দিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৭২টিতে। যা তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ শেয়ারবাজারের ৩৮৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭২টি বা ৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট এখন ফ্লোর প্রাইসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। যেগুলোর সিংহভাগই বিক্রেতাদের চোটপাটে দিনভরই ক্রেতা সংকটে ঘুমায়।
খাতভিত্তিক হিসাবে ফ্লোর প্রাইসে সবচেয়ে বেশি অবস্থান করছে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক, বিমা, বস্ত্র, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশল খাতের শেয়ার। ব্যাংক, বস্ত্র ও বিমা খাতে ৫০ শতাংশের বেশি কোম্পানি এখন ফ্লোর প্রাইসে ঘুমাচ্ছে।
তবে ফ্লোর প্রাইসে ঘুমানো বহুজাতিক এবং শীর্ষ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বহুজাতিক ও শীর্ষ লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, গ্রামীণফোন, সিঙ্গার বাংলাদেশ, রেনেটা, স্কয়ার ফার্মা, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, রেনেটা, ওয়ালটন হাইটেক এখন ফ্লোর প্রাইসের নীরব সাক্ষী। দোর্দণ্ড প্রতাপের ব্লু চিপ খ্যাত কোম্পানিগুলো এখন ফ্লোর প্রাইসে দন্তহীন নিস্তেজ বাঘের ভূমিকায় অবস্থান করছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর তালিকাভুক্ত ২০ খাতের মধ্যে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে মিউচুয়াল ফান্ড। এ খাতের ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র দুটি ফান্ড ফ্লোর প্রাইসের ১০ পয়সা ওপরে লেনদেন হচ্ছে। বাকি ৩৪টি ফান্ডই ফ্লোর প্রাইসের চৌহদ্দিতে বন্দি। গত বুধবার ঢাকঢোল পিটিয়ে গোল্ডেন জুবিলি ফান্ড নামে একটি মিউচুয়াল ফান্ডের আর্বিভাব হয়েছে। সেটিও অভিষেকের পরের দিন ফ্লোর প্রাইসের গণ্ডিতে আটকা পড়েছে। ফলে ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৫টিই এখন ফ্লোর প্রাইসের চৌহদ্দির নজরে বন্দি।
ফ্লোর প্রাইসে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বিমা খাত। এ খাতের ৫৪টি কোম্পানির মধ্যে ৫০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারই ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে: অগ্রণী, কন্টিনেন্টাল, ঢাকা, এক্সপ্রেস, বিজিআইসি, ফেডারেল, জনতা, মেঘনা জেনারেল, নর্দার্ন, পিপলস, ফিনিক্স,
পাওনিয়ার, প্রগতি জেনারেল, প্রগতি লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রাইম জেনারেল, প্যারামাউন্ট, প্রভাতী, পূরবী, রিপাবলিক, ন্যাশনাল লাইফ, সোনার বাংলা, স্ট্যান্ডার্ড, ইউনিয়ন ও ইউনাইটেড। এ খাতে গত বৃহস্পতিবার ইস্টল্যান্ড, প্রাইম লাইফ, রূপালী জেনারেল ও সান লাইফ ফ্লোর প্রাইসের গণ্ডি পেরিয়ে সামান্য উপরে লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংক খাতে এবি, আল-আরাফা, এশিয়া, ব্র্যাক, আইসিবি ইসলামী, ইসলামী, যমুনা, এমটিবি, এনসিসি, এনবিএল, এনআরবিসি, রূপালী, সাউথইস্ট, ট্রাস্ট, ইউসিবি, এসআইবিএল, স্ট্যান্ডার্ড, সাউথ বাংলা, ইউনিয়ন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এ খাতের এক্সিম ব্যাংক ফ্লোর প্রাইস ভেদ করে সামান্য ওপরে উঠেছে।
বস্ত্র খাতে দুই আলিফ, অলটেক্স, আনলিমা, সিএন্ডএ, ডেল্টা, ড্রাগন, দুলামিয়া, এনভয়, ইভিন্স, ফ্যামিলি, হামিদ, এইচআর, খান ব্রাদার্স, কাট্টলী, মতিন, মিথুন, এমএল, পিটিএল, মুন্নু ফেব্রিক, নিউ লাইন, পিডিএল, প্রাইম, রহিম, রিজেন্ট, রিং শাইন, আরএন, সাফকো, শেফার্ড, তাল্লু, তশরিফা, তুংহাই, ভিএফএস, নূরানী, দুই সায়হাম ও দুই জাহিন। এ খাতে গত বৃহস্পতিবার আলহাজ টেক্সটাইল, সিমটেক্স ও এসকে ট্রিমস ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে সামান্য উপরে উঠে লেনদেন হয়েছে।
আর্থিক খাতে বে লিজিং, বিডি ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ, জিএসপি, ফিনিক্স, ডিবিএইচ, ফারইস্ট, ফার্স্ট, ফিনিক্স, লঙ্কাবাংলা, পিএলএফএস ও ইউনাইটেড। গত বৃহস্পতিবার খাতটির মাইডাস ফাইন্যান্স ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে লেনদেন হয়েছে।
প্রকৌশল খাতে আনোয়ার গ্যালভেনাইজিং, অ্যাপেলো ইস্পাত, এটলাস, গোল্ডেন সন, অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজ, ওয়াইম্যাক্স, সাভার রিফেক্সটরিজ, সুহ্নিদ ইন্ডাষ্ট্রিজ, সিঙ্গার, উসমানিয়া গ্লাস, ওয়ালটন হাইটেক, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড।
বৃহস্পতিবার খাতটির বিডি থাই, এসএস স্টিল, ডোমিনেজ স্টিল ও ইয়াকিন পলিমার এ দিন ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে ওপরে উঠে কিছুটা ঝলক দেখিয়েছে। ওষুধ ও রসায়ন খাতে একটিভ ফাইন, এএফসি এগ্রো, গ্লোবাল হেভি, লিবরা, সালভো, স্কয়ার ফার্মা ও রেনেটা।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে রয়েছে চামড়া খাতের অ্যাপেক্স ট্যানারি ও ফরচুন সুজ; বিদ্যুৎ খাতে খুলনা ও সামিট পাওয়ার; সিমেন্ট খাতে এরামিট, ক্রাউন ও হাইডেলবার্গ; টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রামীণ ও রবি; তথ্যপ্রযুক্তিতে ডেফোডিল, খাদ্য খাতে বিচ হ্যাচারি, গেইল, ফু-ওয়াং, ন্যাশনাল ফিড, মেঘনা পেট ও মেঘনা কনডেন্স মিল্ক।