দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বাজারের প্রতি আস্থা নেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। এ অবস্থায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে একটি চক্র। ফলে দুর্বল শেয়ারে হু হু করে বাড়ায় আস্থ বেড়েছে, অন্যদিকে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে দীর্ঘদিন ফ্লোরে পড়ে থাকায় অনাস্থা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে দরপতনে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম খাদের কিনারায়। বিনিয়োগকারীরা ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে আটকে থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না।

অন্যদিকে মৌলভিত্তি শেয়ার উপেক্ষা করে কখনও কখনও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। কিছুদিন বাড়ার পর আবার হঠাৎ করে অস্বাভাবিক দরপতন হচ্ছে। এর ফলে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর সবই ছোট মূলধনের সর্বস্ব কোম্পানি। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই প্রভাবিত করা যায়। যে কারণে চক্রটি কারসাজি করতে ছোট মূলধনের দুর্বল কোম্পানিগুলো বেছে নিচ্ছে। এসব কারণে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কিনে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এর ফলে পুঁজিবাজারে কোনোভাবেই স্বস্তি ফিরছে না। একদিন সূচক কিছুটা বাড়লে পরের দিনই পতনে চলে যায়। আগের দিনের ইতিবাচক বাজার দেখে বিনিয়োগকারীদের যদিও আশা নিয়ে বাজারে আসে, কিন্তু সেদিন চোখে পড়ে পতনের তোড়। এভাবে প্রতিনিয়ত হোচটের মুখে রয়েছেন তারা। কিন্তু বাজারের এই ডামাডোলের মধ্যেও দুষ্ট একটি চক্র লোকসানি ও দুর্বল মৌলের কিছু শেয়ার নিয়ে প্রতিনয়ত মাতামাতি করে চলছে। তারা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তুঙ্গে তুলে নানা রকম গুঞ্জন রটায়, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।

এদিকে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিচার-বিশ্লেষন না করেই শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করে বসেন। তারপর বিক্রির সময় আসার আগেই তারা লোকসানের মুখে পড়ে যান। আজ মন্দা পুঁজিবাজারেও একই ঘটনার অবতারণা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে: সমতা লেদার, বিডি অটোকারস, লিগ্যাছি ফুটওয়ার, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, জেমিন সী ফুড, আমরা টেকনোলজি, প্রাইম ইসলামী লাইফ, আজিজ পাইপ ও জিকিউ বলপেন।

এদিকে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করা অর্থ মাত্র ১৬ কার্যদিবসে দ্বিগুনের বেশি বাড়ছে। আর্থিক ভিত্তি খুব একটা শক্ত না হলেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে কোম্পানিটির শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দামবৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এজন্য ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সতর্কবার্তায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না।

কারসারিজ মাধ্যমে কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের লভ্যাংশের ইতিহাস খুব একটা ভালো নয়। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এমনকি চলমান হিসাব বছরেও কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।

তাদের অভিমত, এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ার দাম হুট করে যেভাবে বেড়েছে, তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পেছনে কারসাজি চক্র জড়িত থাকতে পারে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৯ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৪২ টাকা ৩০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে ৩ এপ্রিল লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৯ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ ১৬ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৯ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।