দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো পরপর দুই বছর লভ্যাংশ দিতে না পারলে এবং নিয়মিত বার্ষিক সভা আয়োজনে ব্যর্থ হলে সেটিকে দুর্বল মানের ‘জেড’ক্যাটাগরিতে শ্রেণিভুক্ত করা কথা। কিন্তু দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দুর্বল মানের ২৩টি কোম্পানিকে উন্নত মানের ‘এ’ ও ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত করে ওয়েবসাইটে দেখানো হচ্ছে।

এতে বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে বিএসইসি। সোমবার ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই বিষয়ে ডিএসইকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মনে করে, দুর্বল মানের কোম্পানিগুলোকে অপেক্ষাকৃত উন্নত মানে শ্রেণিভুক্ত করে বিনিয়োগকারীদের ভুল বার্তা দিচ্ছে ডিএসই। এ জন্য সংস্থাটি ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। গতকাল সোমবার ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ডিএসইকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে। বিএসইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ব্যাখ্যা তলবের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা না মেনে কিছু কোম্পানিকে ডিএসইর ওয়েবসাইটে ভুল শ্রেণিতে দেখানো হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে। তাই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পরপর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ দিতে না পারলে বা নিয়মিত বার্ষিক সভা আয়োজনে ব্যর্থ হলে সেটিকে দুর্বল মানের ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া কোনো কোম্পানি টানা ছয় মাস উৎপাদনে না থাকলে বা পরপর দুই বছর পরিচালন লোকসান করলে কিংবা তারল্য পরিস্থিতি (ক্যাশ ফ্লো) ঋণাত্মক হলে সেই কোম্পানিকেও ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে বিএসইসির।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধান অনুযায়ী ওই ২৩টি কোম্পানি ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু ডিএসইতে এসব কোম্পানির মধ্যে নয়টিকে সবচেয়ে ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত এবং ১৪টিকে মাঝারি মানের কোম্পানি হিসেবে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত দেখা যাচ্ছে।

কোম্পানিগুলো হলো নুরানী ডাইং, রিংশাইন টেক্সটাইল, নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউলাইন ক্লথিং, কাট্টলি টেক্সটাইল, রতনপুর স্টিল রি–রোলিং মিলস, সিভিও পেট্টোকেমিক্যাল, রেনউইক যোগেশ্বর, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাপোলো ইস্পাত, ডেলটা স্পিনার্স, ইয়াকিন পলিমার, রিজেন্ট টেক্সটাইল, ইনটেক লিমিটেড, কেয়া কসমেটিকস, এটলাস বাংলাদেশ, আজিজ পাইপস, সেন্ট্রাল ফার্মা, খুলনা প্রিন্টিং, লিবরা ইনফিউশন, জাহিন স্পিনিং ও জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথম নয়টিকে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত দেখানো হচ্ছে ডিএসইর ওয়েবসাইটে।

পরের ১৪টিকে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত দেখাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাওয়া যায় না। আবার এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হতেও বেশি চার কার্যদিবস লাগে।

কিন্তু ২৩টি কোম্পানিকে ‘এ’ ও ‘বি’শ্রেণিভুক্ত দেখানোর ফলে তাদের শেয়ারের বিপরীতে ঋণসুবিধা যেমন মিলছে তেমনি লেনদেনও নিষ্পত্তি হচ্ছে কম সময়ে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ কারণে ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।