দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি রতনপুর স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলের (আরএসআরএম) বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ, খেলাপি ঋণে জর্জরিত এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির সার্বিক বিষয় খাতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

একই সঙ্গে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা যাচাই করার লক্ষ্যে বিশেষ নিরীক্ষা করাসহ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি বিএসইসি এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত বছরের মার্চে আরএসআরএম অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। একইসঙ্গে কোম্পানির পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন, করপোরেট গভর্ন্যান্স কোড পরিপালন, আইপিও প্রক্রিয়া, নিয়োগকৃত অডিটরের ভূমিকাও যাচাই করতে কোম্পানির বিরুদ্ধে চার সদস্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয় কমিটি। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানির সার্বিক বিষয় ও আর্থিক অবস্থা যাচাই করতে বিএসইসি অ্যানফোর্সমেন্ট বিভাগ থেকে নতুন করে এ দায়িত্ব দিয়েছে।

এদিকে, আরএসআরএম বিএসইসির সিকিউরিটিজ সম্পর্কিত আইন পরিপালন করেনি, ভঙ্গ করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে। সে বিষয়টি জানিয়ে বিএসইসির অ্যানফোর্সমেন্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছে, সার্বিক দিক বিবেচনাপূর্বক আরএসআরএমের সার্বিক বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং বিশেষ নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে করপোরেট রিপোর্টিং বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।এছাড়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে মনোনয়ন প্রদান করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে এসআরআইসি বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সূত্র জানায়, গত বছর তদন্তের বিষয়ে বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর সেকশন ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অ্যাক্ট, ১৯৯৩ এর সেকশন ১৭ (ক) এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন, ২০১৫ অনুযায়ী এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিএসইসি ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস অর্থ পাচার সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখেছে। পাশাপাশি কোম্পানির ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখা হয়েছে।এছাড়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও পর্ষদ কমিটি কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড যথাযথভাবে পরিপালন করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে কমিটি।

একইসঙ্গে কোম্পানির আইপিও প্রক্রিয়া, ডেবট ক্যাপিটাল ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন তথ্য যাচাই করা হয়েছে। কোম্পানির নিয়োগকৃত অডিটরের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা; কোম্পানির রপ্তানি সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহের ব্যর্থতার কারণ যাচাই করা এবং কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা, পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সচিব, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, হেড অব ইন্টারনাল কন্ট্রোলসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা নানা অনিয়মে জড়িয়ে সরাসরি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত বছরের ৬ জানুয়ারি আরএসআরএমের ব্যবসার কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা জানতে চায় বিএসইসি। একইসঙ্গে কোম্পানির বিএমআরই প্রকল্প দুই মাসের মধ্যে পুনরায় চালু করাসহ একটি বড় কর্ম পরিকল্পনার প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।

পরে গত বছর ২৩ মার্চ বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি আরএসআরএমের কারখানা পরিদর্শন করেন। তখন কমিটি কোম্পানির কারখানার সব কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পায়। এদিকে, চলতি বছরের ২৫ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক তথ্যে আরএসআরএম জানিয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কোম্পানির উৎপাদন এক/দুই বছরের মধ্যে চালু হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এ খবরটি ভিত্তিহীন।

দীর্ঘদিন ধরে রতনপুর স্টিলের কারখানা বন্ধ রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বাজারে কোম্পানির কোনও বিক্রি নেই। এতে কোম্পানির নগদ অর্থের প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কোম্পানির ফান্ড ঘাটতির জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছে না। কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট চেষ্টা করছে ফান্ড অ্যারেঞ্জ করে পুনরায় কারখানা চালু করার।

রতনপুর স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৪ সালে। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০১ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ২৯.৯৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৪.৯৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৫.১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে।