স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ব্যাংক খাতে চলছে তারল্য সংকট। ব্যবসা সম্প্রসারণে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না শিল্প-উদ্যোক্তারা। আর ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটে ভুগছে পুঁজিবাজার। এ অবস্থায় বহুমুখী চাপে আছে দেশের পুঁজিবাজার। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলারের দাম বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক সংকটের শঙ্কা, নানা গুজবসহ বেশ কিছু ইস্যু পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সংবেদনশীল পুঁজিবাজার বহুমুখী চাপে মন্দাবস্থার মধ্যে পড়েছে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে নেতিবাচক অবস্থার কারণে পুঁজিবাজারের বিদেশি বিনিয়োগকারী পিছুটান দিয়েছে। তারল্য সংকটের কারণে পুঁজিবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান সক্রিয় হতে পারছে না। আর বড় বিনিয়োগকারী নিস্কিয় হওয়ায় স্বল্প মূলধনের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বেচে নিরাপদ অবস্থান খুঁজছে।

এসব কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থায় সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে নেতিবাচক সূচকের সঙ্গে লেনদেন নেমেছে তলানিতে। এই অবস্থায় পুঁজিবাজাকে চাঙ্গা রাখতে উদ্যোগী হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এর সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জও।

বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী মাসেই বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা সম্মেলন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএসইসি। সম্মেলনটি সমন্বয় করবে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই)। পদক্ষেপ হিসেবে আগামী মাসে কক্সবাজারে সম্মেলন করতে যাচ্ছে বিএসইসি। সেখানে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, তহবিল ব্যবস্থাপক, ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান এবং মিউচুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষক, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড এবং অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডসংশ্লিষ্টরা অংশ নেবেন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘বহুমুখী চাপে আছে পুঁজিবাজার। তবে এত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। মূল সমস্যা হলো ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট। এরপর ডলারের দাম বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও সঞ্চয় কমে যাওয়া, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কিছু ইস্যু বাজারের জন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করছে।’

অন্যদিকে পুঁজিবাজারকে ‘সাপোর্ট’ দিতে তিন ধরনের কর্মপন্থার কথা জানিয়েছে আইসিবি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তিন ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রথমত, কলমানি মার্কেট থেকে টাকা এনেও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগারীদের স্বার্থে শেয়ার কিনে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, আইসিবির কাছে থাকা শেয়ার ক্রেতা খুঁজে বের করে ব্লক মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার কিনে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, স্বল্প সুদে সরকারে কাছে ৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড চাওয়া হয়েছে। মার্কেট সাপোর্টের জন্য সরকার এই টাকা দিলে বিনিয়োগ করা হবে। দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে পুঁজিবাজারে যেন কোনো রকমের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে প্রথমে মার্চেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পর্যায়ক্রমে বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করব। সবাইকে যাতে পুঁজিবাজারে সক্রিয় রাখা যায় সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।