দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অনুমোদিত বিশেষ দুটি শিল্পাঞ্চলে দেশের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্যিক শিল্পগোষ্ঠী এস. আলম গ্রুপের সর্বমোট ৫৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, এইচআর কয়েল খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা, ডিআরআই প্ল্যান্ট খাতে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, প্রাইভেট ইকোনমিক জোন দুটির ডেভেলপমেন্টে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন এই বিশেষ অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল দুটির কার্যক্রম শুরু হলে ৫০ হাজারের বেশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরিসহ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও সরকারের ব্যাপক রাজস্ব আহরণের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আলোকদিয়ায় ১৮৪ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে ‘বাঁশখালী এস. আলম ইকোনমিক জোন-১’। এই প্রকল্পে গ্রিন এনার্জিসহ উচ্চ-সক্ষমতার ‘কম্বাইনড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ নির্মাণে ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখিয়েছেন ও অনেক বিষয়ে তাদের সঙ্গে সমঝোতাও হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অবস্থান সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় এবং জলপথের পরিবহনব্যবস্থার সুযোগ থাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানা গড়ে তোলার আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে। ‘বাঁশখালী এস. আলম ইকোনমিক জোন-১’ এ মোট বিনিয়োগ করা হচ্ছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি পুরোপুরি গড়ে তোলার পর এখানে সরাসরি ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বেজার শর্ত পূরণের জন্য এই প্রকল্পটির ভূমি উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

এ ছাড়া ‘বাঁশখালী এস. আলম ইকোনমিক জোন-২’ বেজা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাথমিক অনুমোদনের পর চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারায় বাস্তবায়নাধীন। এই প্রকল্পটি গড়ে তোলা হচ্ছে ২৫৯ একরজুড়ে। এতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় ‘বাঁশখালী এস. আলম ইকোনমিক জোন-২’ ভারী শিল্পায়নের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। জাপান ও ইউরোপসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যেই স্থানটিতে স্টিল ইন্ডাস্ট্রি (এইচআর কয়েল) গড়ে তোলা ও তা রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলায় কাজ করছেন।

‘বাঁশখালী এস. আলম ইকোনমিক জোন-২’ প্রকল্পটি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হলে সেখানে আরও ৪০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সাশ্রয় হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আরও ৪০০ একর ভূমি ‘বাঁশখালী এস. আলম ইকোনমিক জোন-২’ এ যুক্ত করা ও জাপানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বেশ কিছু মাঝারি ও ভারী শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।

এস. আলম গ্রুপের উদ্যোগে এই ইকোনমিক জোনগুলোতে ইতোমধ্যে ১টি গ্রিন স্টিল প্রজেক্ট ও ১টি গ্রিন কম্বাইনড সাইকেল এলএনজি অ্যান্ড হাইড্রোজেন পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এসব বিনিয়োগ প্রকল্পে ইটিপি, এসটিপি, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, চার লেনের রাস্তাঘাটসহ অন্য অবকাঠামো ও শিল্প উন্নয়ন সুবিধা রয়েছে। ফলে শিল্পাঞ্চলগুলোর মাধ্যমে বেজার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বিস্তৃত হবে।

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রসারের বিকল্প নেই। এস. আলম গ্রুপের এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি টেকসই শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় সরকারের ভিশন অর্জনের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতি জোরদার এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অত্যাধুনিক অবকাঠামো তৈরি ও নির্বিঘ্ন পরিবহনব্যবস্থার মাধ্যমে অনুসরণীয় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলায় পর্যাপ্ত সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় কাজ করেছে বেজা কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় অর্থনীতিতে এস. আলম গ্রুপের ইকোনমিক জোন দুটির ভূমিকা প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ইতোমধ্যেই এস. আলম গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট অঞ্চল বাঁশখালীতে ট্যাক্স প্রদানকারীর সংখ্যা ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি গত ৫ বছরে কয়েক গুণ বেড়েছে। আগামী ৫-৬ বছরে ইকোনমিক জোনের প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ট্যাক্স ও সরকারের রাজস্ব বাড়বে তাৎপর্যপূর্ণভাবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, লাইসেন্স প্রদান, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

শিল্প খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। বেজা এখন পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি, পিপিপি, জিটুজিসহ ৬ ধরনের ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে এবং ২৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নাধীন।