সাজিদ হাসান রাসেল: ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল একজন কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে সমাজসেবক, দানশীল এবং মানবিক ডাক্তার খুবই পরিচিত। কারণ দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার শুরু থেকেই জীবন বাজি রেখে এই চিকিৎসক দম্পতি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। সেবা দিতে গিয়ে তিনি স্বপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হন। এর পরও তিনি থেমে থাকেননি। প্রতিনিয়ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী নুজহাত চৌধুরী শম্পা চিকিৎসক। তাই করোনা ভয়কে জয় করেছেন তারা। রোগীদের কাছে তারা ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’। তারই পরিপ্রেক্ষিতে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল তাকে কোভিড হিরো পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করে।

তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন আলোকিত মানুষ। অধ্যাপক মাহতাব স্বপ্নীল করোনা মহামারির সময় করোনা বিপণনদের খাবার, হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণসহ ১৬টি কার্যক্রম চালু করেন। লকডাউনের সময় তিনি ২৪ জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি টিম গঠন করেন। যারা প্রতিদিন ৩০০ রোগীকে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সেবা দিয়েছেন।

গরীব দুঃখী মানুষের ডাক্তার খ্যাত, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা দানকারী, কিংবদন্তি মানুষ, সমাজসেবক হিসেবে খুবই পরিচিত ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ, সৎ, আন্তরিক, অমায়িক এবং বিনয়ী ব্যক্তি হিসেবে সকলের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁর মধ্যে নেই কোনো অহমিকা বা অহংবোধ। বরং তিনি সকল স্তরের মানুষকে খুব সহজেই বুকে টেনে নেন। এজন্য সকলের কাছে তার রয়েছে আলাদা ও স্বতন্ত্র গ্রহণযোগ্যতা।

একটা উধাহরন না টেনে পারি না আমি তখন ঢাকা কলেজে অধ্যয়নত এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমটির উপ অর্থবিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। তখন বাবা ক্যানসার আক্রান্ত। কিভাবে চিকিৎসা করবে কোন দিকবেগিক খুঁজে পাচ্ছি না। তখন ডাক্তার মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ভাই কাছে যাই। তিনি একাধারে আমার বাবার চিকিৎসা করান। অনেক সময় দেখা গেছে চিকিৎসার জন্য যে টেস্টগুলো দিয়েছে আমি টাকার জন্য করাতে পারতাম না কিন্তু ঠিকই তিনি ডাক্তার মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ভাই অনেক সময় ফ্রি ও নামমাত্রা টাকার বিনিময়ে টেস্ট করিয়ে দিয়েছেন।

পাশাপাশি বাবা অসুস্থ থাকা অবস্থা ডেল্টা হসপিটাল মিরপুরে কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য বলা হলেও সেখানে ডাক্তার মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ভাই সহযোগিতা করছেন। এরকম একজন মানবিক ও পরউপকারী মানুষকে নিয়ে মিথ্যা ও গুজব ছড়ানো মোটেই কাম্য নয়। অথচ সেই মানবিক ডাক্তার মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে নিয়ে ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন গনাধ্যমে যা প্রকাশিত হয়েছে তা খুবই দু:খজক।

সাদামনের হাসিমাখা এই মানুষটি যেমন পরিচ্ছন্ন ঠিক তেমনি নম্রভদ্রও। অত্যন্ত মেধাবী এই ডাক্তার যিনি ছাত্রজীবন হতে আজ অবদি কখনও দ্বিতীয় হননি। অমায়িক ব্যক্তিত্ব যিনি কখনও কারো সাথে মুখ কালো করে কথা বলেননি। নির্লোভ, নিরহংকারী ব্যক্তিত্ব যিনি অর্থ মোহে যুগের তালে নিজেকে ভাসিয়ে দেননি। পরোপকারী মানুষ যার কাছে এসে কেউ কখনও খালি হাতে ফিরেনি। এমন বহু গুণের অধিকারী ডা: মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। আসলে রাহিব রেজা নামে যে রোগীটি মারা গিয়েছে সেই বিষয়ে একটু বলা দরকার। প্রকৃতপক্ষে কারো অকাল মৃত্যু আমাদের সমাজে কারো কাম্য নয়। সে যেই হোক!

প্রতিদিন সারা পৃথিবীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বহু রোগী মারা যায় যার সুনির্দিষ্ট কোন কারন বা যুক্তি থাকতেও পারে আবার নাও পারে। তবে গভীর অনুসন্ধান এবং পর্যালোচনায় জানা যায়, যে রাহিব রেজা নামক রোগীটির রিপোর্ট সবগুলোই দেখা হয়েছে, সেখানে এন্ডোসকপি করা যাবে না, এমন কোনো রিপোর্ট ছিলো না। কিংবা এন্ডোসকপি করা যায় না, এমন কোনো রোগ যে আছে, সেই কথাও রোগীর স্বজনরা সেটা জানাননি। রোগীর স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অন্য কোন জটিলতা আছে সেটাও জানানো হয়নি।

এদিকে রোগীর স্বজনরা না বুঝে আবোল তাবোল মন্তব্য করেছে, সেটা হয়ত শোকাবহ মানসিকতা থেকে হতে পারে। পৃথিবীর কোথাও এন্ডোসকপি করার আগে ঘুম পাড়ানোর আগে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার নিয়ম নেই। ঘুম পাড়িয়ে করলে সহজেই এন্ডোসকপি করা যায়। এক্ষেত্রে তাই করা হয়েছে। যা মেডিকেল ট্রিটমেন্টের সহজতর প্রক্রিয়ার একটি বিষয়।

আরো জানা যায় যে, এন্ডোসকপি করার এক্ষেত্রে রোগীর সম্মতি নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে এখানে তাই করা হয়েছে। যা যা যন্ত্রপাতি দরকার সবকিছুই রাখা হয়েছিলো। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে জরুরি ভিত্তিতে যা করার প্রয়োজন সবই করা হয়েছিলো। তাহলে ডা. স্বপ্নীলকে ঘিরে কিছু অযাচিত মন্তব্য নি:সন্দেহে অগ্রহণযোগ্য। যে মানুষটির বেড়ে উঠা মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে তাকে সেরা না বললে সেরা শব্দটির ভাবার্থ কোথায়?

অন্যভাবে বললে, আলোকে আঁধার কখনও ঢাকতে পারে না বরং আলো আসলে আঁধার এমনিতেই মিটে যায়। এদিকে আবার ষড়যন্ত্রকারীরাও সরব এবং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কিছু ইউটুবার, কিছু পথভ্রষ্টের সমন্বয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা তাতো রয়েছেই। পরিশেষে এতটুকু বলা যায় ডা: স্বপ্নীল একটা ব্র্যান্ড! তিনি একজন মানবিক ডাক্তার।

ডা. স্বপ্নীলের করোনা নিয়ে প্রায় ১৭টি গবেষণাপত্র দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। লিভার রোগীদের ভ্যাকসিন নীতিমালা প্রস্তুত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে তিনি বিভিন্ন মিডিয়ায় টকশো ও লেখালেখি করেন। এর আগে তিনি গ্লোবাল বিজনেস সিএসআর অ্যাওয়ার্ড ২০২১ ও ওয়ানকা গ্লোবাল হেলথকেয়ার লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২১ অর্জন করেন।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) । তিনি ১৯৭০ সালের ২২ আগস্ট সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম ইঞ্জিনিয়ার মাহতাব উদ্দিন আহমেদ সিলেট জেলার ছড়ারপাড়ে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন।

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে এমবিবিএস ১৯৯৮ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে এমএসসি এবং ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেপাটোলজিতে এম.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। অধ্যাপক মাহতাব মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়া থেকে ২০২২ সালে মেডিসিনে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ইন্ডিয়ান কলেজ অব ফিজিসিয়ানস, রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব আয়ারল্যান্ড এবং রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব লন্ডন এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সেসের ফেলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সদ্য-সাবেক চেয়ারম্যান। পাশাপাশি অধ্যাপক স্বপ্নীল জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও মেটাবোলজি বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক এবং ভারতের অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেস, ঋষিকেশের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের বোর্ড অব স্টাডিজের সদস্য।

অধ্যাপক স্বপ্নীল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিন-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের ভাইরাল হেপাটাইটিস, এইচআইভি এবং সেক্সচুয়ালী ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন ডিজিজ সংক্রান্ত স্ট্র্যাটেজিক এন্ড টেকনিক্যাল এডভাইজারি গ্রুপের অন্যতম সদস্য। তিনি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালায়া, ইরানের তেহরান ইউনিভার্সিটি, ভারতের ইউনিভার্সিটি অব মাদ্রাজ ও ড. এপিজে আবুল কালাম টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি সুপারভাইজার ও পরীক্ষক।

অধ্যাপক স্বপ্নীল এশিয়ান প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভারের হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, একিউট অন ক্রনিক লিভার ফেইলিউর, লিভার ফাইব্রোসিস এবং বাডচিয়ারি সিন্ড্রোম সংক্রান্ত গাইডলাইন কমিটিগুলোর সদস্য। তিনি ইউরোপিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভারের ফ্যাটি লিভার সংক্রান্ত আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলেরও সদস্য।

তিনি একাধিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রধান গবেষক হিসাবে কাজ করেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের থেরাপিউটিক ভ্যাকসিন ন্যাসভ্যাকের ফেইজ ১, ২ ও ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। তার গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ওষুধটি এরই মধ্যে কিউবাসহ একাধিক দেশে রেজিষ্ট্রেশন পেয়েছে এবং বাংলাদেশেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধটির রেসিপি অনুমোদন করেছে। বর্তমানে জাপানে ওষুধটির ব্যাপকভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশে উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেরও প্রধান গবেষক।

অধ্যাপক স্বপ্নীল এদেশের ঐতিহ্যবাহী ঔষধী গুনসম্পন্ন কিছু গাছ-গাছালিকে ডকিং বা ড্রাগ ডিজাইনিং, এইচপিএলসির মাধ্যমে ডোজ নির্ধারণ, ইন ভিটরো ও এনিমেল স্টাডি এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করছেন। ইতিমধ্যে লিভার ক্যান্সার রোগীদের উপর যষ্ঠী মধু দিয়ে পরিচালিত একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক স্বপ্নীল বর্তমানে কালমেঘ, আমলকী, অর্জুন, কাটা গেইদলে এবং সাজনা নিয়ে ফ্যাটি লিভার ও লিভার ক্যান্সারে কাজ করছেন।

এই সমস্ত গবেষণার জন্য অধ্যাপক স্বপ্নীল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সাথে বৈজ্ঞানিক কোলাবোরেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বিভিন্ন দেশী-বিদেশী বৈজ্ঞানিক জার্নালে অধ্যাপক স্বপ্নীলের ৩৩০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। চলমান কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকের সময় তার এ সংক্রান্ত ২৬টি গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া দেশী-বিদেশী বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে তিনি ৩৫০টিরও বেশি লেকচার প্রদান করেছেন।

অধ্যাপক স্বপ্নীল এ পর্যন্ত ৫টি লিভার বিষয়ক টেক্সট বই সম্পাদনা করেছেন যার প্রতিটি বিভিন্ন খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক মেডিকেল প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করেছে। এগুলো হচ্ছে ‘লিভার ঃ এ কমপ্লিট বুক অক হেপাটো-প্যানক্রিয়াটো-বিলিয়ারী ডিজিজেজ’ (প্রকাশকঃ এলসেভিয়ের, প্রকাশকালঃ ২০০৯), ‘কম্প্রিহেনসিভ টেক্সট বুক অব হেপাটাইটিস বি’, ‘টেক্সট বুক অব হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’ ও ‘হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি প্রেসক্রাইবার’ (প্রকাশকঃ জেপি ব্রাদার্স, প্রকাশকাল যথাক্রমেঃ ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৬) এবং ‘ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ (প্রকাশক : ম্যাকমিলান পাবলিশার্স, প্রকাশকালঃ ২০১২)।

পাশাপাশি অধ্যাপক স্বপ্নীল মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন। তার অনুবাদ গ্রন্থ ড. হেনরি কিসিঞ্জারের ‘হোয়াইট হাউজ ইয়ারস’ অবলম্বনে ‘প্রেক্ষাপট ঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ এবং মেজর জেনারেল (অবঃ) লক্ষণ সিং-এর ‘ভিক্টরি ইন বাংলাদেশ’ অবলম্বনে ‘একাত্তরের বিজয়’ প্রকাশিত হয় সাত সকাল প্রকাশনী থেকে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে। মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশ করেছে তার প্রবন্ধ সংকলন ‘সেকাল একালের কড়চা’, ‘এখন সময় বাংলাদেশের’, ‘পথ হারাবে না বাংলাদেশ’, ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’, ‘কোভিড-১৯’ ও ‘পদ্মা সেতু – অর্থনীতি উন্নয়ন ও অন্যান্য’ যথাক্রমে ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে, মুক্তধারা প্রকাশ করেছে ‘লিভার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা’ ২০১৮ সালে আর অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লব এবং রাজনীতির এই সময়’ ২০২৩ সালে। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। পাশাপাশি অধ্যাপক স্বপ্নীল নিয়মিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে লিভার রোগ ও সমসাময়িক বিষয়ে টকশোতে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

একাধিক শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক স্বপ্নীল। তিনি এশিয়ান প্যাসিফিক ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার কর্তৃক প্রকাশিত হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনালের এসোসিয়েট এডিটর, ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল এসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত ইউরোএশিয়ান জার্নাল অব হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির কো-এডিটর ইন চীফ, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব দ্যা লিভার কর্তৃক প্রকাশিত জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এন্ড এক্সপেরিমেন্টাল হেপাটোলজির এডিটোরিয়াল বোর্ডের সদস্য, কলিঙ্গ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত হেপাটাইটিস বি এন্যুয়ালের কো-এডিটর ইন চীফ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ফ্রন্টিয়ার্স ইন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির রিভিউয়ার এডিটর।

তিনি ২০১৩ সালে আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিস্টিংশন’ অর্জন করেন আর ২০১৪ সালে ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল এসোসিয়েশন কর্তৃক ‘অর্ডার অব মেরিট’-এ ভূষিত হন। ভারতের কলিঙ্গ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল ফাউন্ডেশন তাকে ২০১৫ সালে সম্মানসূচক ‘ব্লুমবার্গ ওরেশন’ প্রদান করে। ২০১৬ সালে তিনি ভারতের চেন্নাইয়ের ভেনাস রিসার্চ ফাউন্ডেশন থেকে ‘ডিসটিংগুইশড সাইন্টিস্ট ইন হেপাটোলজি’ পদক লাভ করেন।

২০১৭ সালের ‘হুজ হু’-তে তার জীবনী অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। তিনি ২০১৮-তে মাক্র্ইুস হুজ হু কর্তৃক ‘এলবার্ট নেলসন মার্কুইস লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড’ এ ভুষিত হন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ তাকে ‘বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো স্বর্ন পদক ২০১৮’ প্রদান করেছে। অধ্যাপক স্বপ্নীল ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা দিবস-২০২১’ এওয়ার্ড এবং ২০২২ সালে “ভাইস চ্যান্সেলর এওয়ার্ড-২০২২’ লাভ করেন।

তবে অধ্যাপক স্বপ্নীলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন দু’টি হচ্ছে কিউবান একাডেমি অব সাইন্সেস কর্তৃক ন্যাসভ্যাক উদ্ভাবনের জন্য ২০১৯-সালে যৌথভাবে ‘প্রিমিও ন্যাশনাল’ পদক এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সেস কর্তৃক ‘বাস গোল্ড মেডেল এওয়ার্ড ২০২১’ লাভ। ২০১৮ সালের ১২ জুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে ১৫০ জন লিভার বিশেষজ্ঞের স্বাক্ষরিত যুক্ত বিবৃতিটি লন্ডন, প্যারিস ও নিউ ইয়র্ক থেকে একযোগে প্রকাশের মাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক ন্যাশ (ফ্যাটি লিভার) দিবস’ প্রোক্লেইম করা হয় তিনি তাদের অন্যতম। তার উদ্যোগে এই দিবসটি ২০২০ এবং ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস’ হিসাবে উদ্যাপিত হয়।

এছাড়াও তার গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব দ্যা লিভার, ওয়ার্ল্ড গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অর্গানাইজেশন, এশিয়ান-প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভার, এশিয়া-প্যাসিফিক প্রাইমারী লিভার ক্যান্সার এক্সপার্ট গ্রুপ, জাপান সোসাইটি অব হেপাটোলজি, টার্কিশ সোসাইটি অব হেপটো-বিলিয়ো-প্যানক্রিয়াটোলজি এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব দ্যা লিভার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে পুরষ্কৃৃত হয়েছেন।

কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় অধ্যাপক স্বপ্নীল ওয়ালটন গ্রুপ কর্তৃক ‘হেলথকেয়ার হিরোজ এওয়ার্ড ২০২০’, বাংলাদেশ-আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স কর্তৃক ‘গ্লোবাল বিজনেস সিএসআর এওয়ার্ড ২০২১’, ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানস কর্তৃক ‘গ্লোবাল হেলথকেয়ার লিডারশিপ এওয়ার্ড ২০২১’ এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ‘কোভিড-১৯ হিরো’ এওয়ার্ডে ভূষিত হন।

বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের তিনি পরপর চারবার নির্বাচিত জেনারেল সেক্রেটারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি এলুমনাই এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

পাশাপাশি তিনি ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের সাধারণ সম্পাদক, এশিয়ান প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের কার্যকরী সদস্য এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর স্টডি অব দ্যা লিভারের ইন্টারন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর। তিনি বর্তমানে রোটারি ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১ এবং ৩২৮২-এর ন্যাশনাল পলিওপ্লাস কমিটির সদস্য।

অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশ স্টেম সেল এন্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তিনি ইন্টার-একাডেমি পার্টনারশিপের রিজেনারেটিভ মেডিসিন সংক্রান্ত ওয়ার্কিং পার্টির সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ১২ জন সদস্যের অন্যতম। তিনি বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ইন্টারভেনশনাল এন্ডোস্কোপিস্ট। তার রয়েছে দুই হাজারের বেশি ইআরসিপি, চল্লিশ হাজারের বেশি আপার জিআই এন্ডোস্কোপি এবং পাচ হাজারের বেশি কোলনোস্কোপি করার অভিজ্ঞতা।

পাশাপাশি অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশে লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক পদ্ধতি ট্রান্স-আর্টারিয়াল কেমো-এম্বোলাইজেশন (টেইস)-এর পুরোধা। পাশাপাশি তিনি লিভার ফেইলিওরে অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেমসেল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, প্লাজমা এক্সচেঞ্জ ও লিভার ডায়ালাইসিসেরও পথিকৃত। ভয়েস অব আমেরিকা ও বিবিসি বাংলা এ নিয়ে তার সাক্ষাৎকার ú্রচার করেছে। তিনি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত একাধিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন আয়োজনের কৃতিত্বের অধিকারী। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালে প্রথম ‘স্টেমকন’ (স্টেম সেল থেরাপীর উপর আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন) ও ২০১৯ সালে প্রথম ‘এন্ডোভাসকুলোকন’ (এন্ডোসকোপি স্যুইট ও ভাস্কুলার ল্যাব থেকে প্রথম লাইভ সম্মেলন) আয়োজন।

ছাত্রজীবনে অধ্যাপক স্বপ্নীল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার সহ-সভাপতি ও মমেকসুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেলে আপ্যায়ন সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের (মাইনুদ্দিন হাসান চেীধুরী-ইকবালুর রহিম-মাহবুবুল হক শাকিল কমিটির) সাবেক সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের নির্বাচিত সাবেক কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর। অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য। তিনি ২০১৯ ও ২০২২ সালে আওয়ামী লীগের ২১তম ও ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পাশাপাশি তিনি সম্প্রীতি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক। অধ্যাপক স্বপ্নীল হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী মেমোরিয়াল কাউন্সিল-এর সহ-সভাপতি এবং জালালাবাদ যুব সম্মাননা পরিষদ-এর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা। তিনি জালালাবাদ এসোসিয়েশন, ঢাকা’র আজীবন সদস্য।

অধ্যাপক স্বপ্নীল ১৯৯৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী (শম্পা), শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী এবং শহীদ জায়া বেগম শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী (একুশে পদক প্রাপ্ত)-এর কনিষ্ঠ কন্যা। অধ্যাপক নুজহাত বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক। অধ্যাপক স্বপ্নীল-শম্পা দম্পতির রয়েছে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। দুজনেই অধ্যয়নরত।

লেখক: মো: সাজিদ হাসান রাসেল, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, শাহবাগ থানা আওয়ামীলীগ
সাবেক উপ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ,
প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ