মো: একরামুল হক, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: হাটহাজারী উপজেলা চলছে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই প্রায় অর্ধশতাধিক করাতকল। এসব মিলের কারণে ধ্বংস হচ্ছে বনজ ও ফলদসহ নানা প্রজাতির গাছ। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। শুধু তাই নয়, সরকারের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে ওঠা ওই সব স’ মিল বা করাতকলের শব্দদূষণের ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

এতে সহযোগিতা করছেন বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এভাবে চলতে থাকলে উজাড় হয়ে যাবে সংরক্ষিত বন বাগান। বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই চলছে এগুলো। এসব করাতকলে উজাড় হচ্ছে বনের গাছ। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রেঞ্জ অফিস ও বিট অফিসের নাকের ডগায় নাজিরহাট কলেজ থেকে নতুন রাস্তার মাথা পর্যন্ত ১৬টি, নুরালী মিয়ারহাটে ৪টি, কাটিরহাটে ৬টি, মনিয়াপুকুরপাড়ে ৫টি, বালুর ঢাল ১টি, সরকারহাট ৪টি, মুহুরীহাট বটতল ২টি, কলঘর ১টি, চারিয়া মাদ্রাসা ২টি, হাটহাজারী পৌর সদর এলাকায় ১২টি, ছড়ারকুল ২টি, ফতেয়াবাদ মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ৩টি, চবি ১নং গেইট ২টি সহ মোট ৬২টি করাতকল স্থাপন করে দিনরাত চোরাই কাঠ চেরাই করছেন মালিকরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেস্ট গার্ডদের সহযোগিতায় দিনের পর দিন এসব করাতকল চালু রয়েছে। এসব করাতকল ও অতিরিক্ত গাছ চুরির কারণে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান ধংস হয়ে যাচ্ছে। করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান না থাকায় অনুমোদনহীন এসব অবৈধ করাতকলের মাধ্যমে বেপরোয়াভাবে চলছে বৃক্ষ নিধন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন বিভাগের আইনে বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অবাধে চলছে এগুলো। সংরক্ষিত সামাজিক বনায়নের ভিতর, বনঘেঁষে, এমনকি বন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের কাছেই স্থাপন করা হয়েছে অবৈধ করাতকল। সেখানে গাছ চোর ও কাঠ ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে চেরাচ্ছে বনের গাছ। ফলে উজাড় হচ্ছে বন।

এতে সংকটে পড়ছে বন্যপ্রাণী। গত ২৭ জানুয়ারী উপজেলার ধলই ও ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের নামমাত্র দুটি করাতকলের মালামাল জব্দ করে বনবিভাগ। এই অভিযানে নেতৃত্বে দেন সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন, রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং স্টেশন কর্মকর্তা রাজীব উদ্দিন ইব্রাহীম।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক করাতকল মালিক জানান, আমাদের কয়েকটি করাতকলে অভিযান চালানোর দুটো কারণ একটি হলো প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের আগে প্রতিটি করাতকল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তাদেরকে দিতে হয়। যার কোন রশিদ নেই। এই নির্দিষ্ট সময়ে টাকা দিতে না পারলে কয়েকটিতে অভিযান চালানো শুরু হয়।

তারপর দ্বিতীয়টি হলো কয়েকটি করাতকলে অভিযান পরিচালনা করা মানে বাকীদের জানান দেয়া হয়। টাকা দ্রুত পরিশোধ করা এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা থেকে বাড়তি অর্থ আদায় বলে তাদের দাবি। হাটহাজারী ১১ মাইল বনজ দ্রব্য পরীক্ষণ ফাঁড়ির স্টেশন কর্মকর্তা রাজীব উদ্দিন ইব্রাহীম বলেন, আমি কিছুই জানি না। যা জানেন মন্দাকিনী বিট কর্মকর্তা ও হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা। ওনাদের কাছে ফোন করেন।

কতটি করাতকল ও ইটভাটা আছে তা জানতে চাইলে হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি তো বিভাগীয় মিটিংয়ে আছি। আপনাকে তথ্য দেয়ার জন্য আমি ১১ মাইল স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) রাজীব উদ্দিন ইব্রাহীম কে আপনার কাছে ফোন করার জন্য বলছি।
চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো: জয়নাল আবেদীন বলেন, আসলে কতটা করাতকল আছে সেটা আমার কাছে মুখস্থ নেই। তবে অবৈধ করাতকলে অভিযান করার জন্য ইউএনও এবং ওসি সাহেব কে কতবার বলেছি এবং কতবার গেছি তার কোন হিসাব নেই।

এরপরও তাদের কোন সহযোগিতা পায়নি। তাই অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। এরপর ইউএনও এবং ওসি ছাড়া কিভাবে রেঞ্জ কর্মকর্তা এবং এসও মিলে ধলই এবং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের দুইটি করাতকলে অভিযান চালিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর চাইলে তিনি বলেন, আমি এই অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানি না। আসলে বনবিভাগের বিষয়ে কোন তথ্য সাংবাদিকদের কে দেয়ার নিয়ম আমাদের কাছে নেই।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, করাতকলের সঠিক তথ্য বনবিভাগের কাছে থাকে। তবে বনবিভাগ ধলই এবং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের দুটি করাতকলে অভিযান চালিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা আমাদের কে জানায়নি। তারপরও আমি করাতকলের বিষয়টি দেখছি।

হাটহাজারী উপজেলায় কতটি করাতকল আছে তার মধ্যে কতটা বৈধ এবং অবৈধ আছে এমন তথ্য ১১ মাইল স্টেশন কর্মকর্তা, রেঞ্জ কর্মকর্তা এবং সহকারী বন সংরক্ষক এর কাছে জানতে চাইলে তারা তথ্য না দিয়ে বরং ইউএনও এবং ওসি উপর দোষারোপ করেছেন এমন বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এসএম কায়চার (০১৯৯৯০০২২২২) এই নাম্বারে ফোন করা হলে তা সাময়িক বন্ধ আছে বলে জানায় কাস্টমার কেয়ার।

এরপর অফিসের ল্যান্ড ফোন (০২৩৩৩৩৬৪৩৯৯) এই নাম্বারে ফোন করলে তা রিসিভ করেন পিএ তফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন আপনার কোন তথ্য জানার থাকলে অফিসে এসেই নিতে হবে। তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলেন না।