আবদুর রহমান ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সূচকের বড় দরপতনে নেপথ্যে ছিলো শীর্ষ মুলধনী ২ কোম্পানি। মুলত গ্রামীণফোন ও বিএটিবিসি জোটবদ্ধ হয়ে ডিএসইতে সূচকের পতন ঘটায় ৪৪ পয়েন্ট। ফলে ডিএসইতে সূচকের বড় দরপতন হলেও লেনদেন বেড়েছে। ডিএসইতে সোমবারের তুলনায় ৫০ কোটি ৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

তবে টানা দরপতনে পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নিরবে হারিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাজার ইস্যুতে নিরব আচরন করছেন ডিএসই ও বিএসইসি। ফলে পুঁজিবাজারের এ অস্থিতিশীলতার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিনিয়োগকারী সহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পুঁজিবাজার একটি সংবেদনশীল জায়গা। এ ক্ষেত্রে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ ফ্লোর প্রাইস এবং জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে কোন ধরণের বিবেচনা না করেই একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি সার্কুলার দিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আবার তা পরিবর্তন করেছে। দুইদিন পরে আবারও ২২টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে দিয়েছে।

এর পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়, নতুন করে আর কোন কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে যাবে না। এর দুই দিন পরই আবার ছয়টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতে এই কাজগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা সুক্ষভাবে একবারেই করতে পারতো। বারবার এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে পুরো পুঁজিবাজারে। যার ফলে টানা দরপতনে বাজার নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) এক নেতা বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এটা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল যে, জেড ক্যাটাগরিতে যাবে কি না। তখন ২২ কোম্পানির শেয়ার জেড ক্যাটাগরিতে আসার কারণে পুঁজিবাজার ঝিমিয়ে পড়ে। এসব কোম্পানির শেয়ারে অনেকের বিনিয়োগ ছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল এ তালিকা আরও বড় হতে পারে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। বিএসইসি’র এমন সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে মঙ্গলবার ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ২৩২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩টি। এর ফলে ডিএসইতে ৮৪৩ কোটি ৭২ লাখ ৫৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সোমবারের তুলনায় আজ ডিএসইতে ৫০ কোটি ৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। গত সোমবার ডিএসইতে ৭৯৩ কোটি ৬৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৪৪.১০ পয়েন্ট বা ০.৭১ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৩১.১৪ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৪.২৭ পয়েন্ট ০.৩১ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৪০.৩৬ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১০.৬১ পয়েন্ট ০.৫০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৭.৭১ পয়েন্টে।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৮১.২৭ পয়েন্ট বা ০.৭৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৫৯.১৫ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪৪.৭৮ পয়েন্ট বা ০.৮১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫৯৫.৪৭ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৪.৬৫ পয়েন্ট বা ০.৪০ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৩৪.২০ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ১৪৩.৭৩ পয়েন্ট বা ১.০৯ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ২৩.৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

আজ সিএসইতে ২৫৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৮২টির, কমেছে ১৩৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির। দিন শেষে সিএসইতে ১২ কোটি ৭৪ লাখ ১১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার টাকার শেয়ার।