দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে ৪২টি মার্কেট ও ১২ বস্তি। এসব মার্কেটে নেই অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এসব মার্কেটের চলাচলের পথও সরু, একটি ভবনের সঙ্গে অন্যটি লাগানো। নেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ৪২ মার্কেট ও ১২ বস্তি অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের জরিপের মাধ্যমে ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, অগ্নিঝুঁকির তালিকায় থাকা মার্কেটগুলোর কর্মকর্তাদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ উদাসীন কর্তৃপক্ষ।

অগ্নিঝুঁকির তালিকায় থাকা একটি মার্কেট হলো রিয়াজুদ্দিন বাজার। যেখানে একসঙ্গে ১০ হাজারের অধিক দোকান রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে- খাতুনগঞ্জ, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকুমন্ডি লেন, গোলাম রসুল মার্কেট, বাগদাদ ইলেকট্রিক সুপার মার্কেট, হাজি সরু মিয়া মার্কেট, নুপুর মার্কেট, সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট, পোর্ট মার্কেট, বড় পুল বাজার, ইসা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকিরহাট মার্কেট, নয়াবাজার মার্কেট, ফইল্লাতলী বাজার, অধীন চৌধুরী মার্কেট, মহাজন টাওয়ার, চকভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিংমল, গুলজার মার্কেট,

আলী মার্কেট, মতি টাওয়ার, শাহেন শাহ মার্কেট, হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার সাপার মার্কেট, নজু মিয়া হাট মার্কেট, বলির হাট মার্কেট, ভেড়া মার্কেট, চালপট্টি, শুঁটকিপট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মিয়া খান পুরোনো জুট মার্কেট, ওমর আলী মার্কেট, শেখ ফরিদ মার্কেট, যমুনা সুপার মার্কেট, ষোলশহর সুপার মার্কেট, ইমাম শপিং কমপ্লেক্স ও চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স।

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা বস্তিগুলো হলো: ঝাউতলা, আমবাগান, কদমতলী রেলওয়ে বস্তি, কলসি দিঘির পাড় কলোনি, আকমল আলী কলোনি, লামার বাজার এলাকায় অবস্থিত রেলওয়ে বস্তি, অক্সিজেন এলাকার রেলওয়ে বস্তি, বার্মা কলোনি, দুই নম্বর গেট ড্রাইভার কলোনি, রৌফাবাদ কলোনি, শেরশাহ কলোনি ও ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত রেলওয়ে বস্তি।

এদিকে, গতবছওে ১৭ এপ্রিল নগরের ৬৪টি মার্কেট-বিপণিবিতান মালিক সমিতিকে চিঠি দিয়ে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঢাকার বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটসহ বিপণিবিতানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফলশ্রুতিতে ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে কিছু মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এসব ঘটনার যেন উদ্রেক না হয় সে জন্য বিপণিবিতান ও মার্কেটসমূহে পাঁচটি নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার অনুরোধ করা হয়।

নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে: পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক/নিরাপত্তা প্রহরী নিযুক্ত করা, রাত্রিকালীন বিশেষ করে মার্কেট বন্ধের পর সমিতির সদস্যদের পালাক্রমে নিযুক্ত করা, প্রযোজ্য স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামাদি ব্যবস্থা রাখা, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেন নিরাপদে মার্কেটে আসা যাওয়া করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গতবছরের ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে বলা হয়, প্রত্যেক মার্কেটে ফায়ার সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। সেফটি প্ল্যান না মানলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সভায় উপস্থিত সবার সর্বসম্মতিক্রমে ১১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি দোকানের ফায়ার লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র সংরক্ষণ করতে হবে, প্রতিটি মার্কেট সমিতিকে অগ্নিনির্বাপণসহ জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজস্ব প্লান থাকতে হবে, মার্কেট সমিতি বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে।

এসব সিসি ক্যামেরা নজরদারির জন্য ৩-৪ জন কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে, ডিস ও ইন্টারনেট লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে নেওয়ার জন্য মার্কেট সমিতি কর্তৃক ডিস ও ইন্টারনেট মালিকদের অনুরোধ করবেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেটসহ, সিটি করপোরেশন, সিডিএ-এর নিয়ন্ত্রণাধীন মার্কেটসমূহের ব্যবসায়ী সমিতি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। মার্কেটে রিজার্ভ টাংকি, গাড়ি পার্কিং এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রতিটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্ব-স্ব বাজারে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন।

তারা মার্কেট/বাজার পরিদর্শন করে স্ব-স্ব বাজার ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিকে নিরাপত্তার তথ্য জানাবেন, ফুটপাত অবমুক্ত করার জন্য সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হবে, বৈদ্যুতিক লাইনের তার বর্তমান সময় উপযোগী করার জন্য বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়া, জহুর হকার্স মার্কেট দুইটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় ওই দুইটি পাহাড় থেকে বড় বড় ট্যাংক বসানোর জন্য মার্কেট প্রতিনিধি নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে,

মহানগর এলাকায় পুকুরগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে সেগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে চারদিকে হাঁটার ব্যবস্থা করা। সর্বশেষ সিদ্ধান্তে বলা হয়, ফায়ারের বিষয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ/প্রতিটি ব্যবসায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক বলেন, ‘সম্প্রতি চট্টগ্রামের সবকটি মার্কেট ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হয়েছে। এসব মার্কেটে কোথায় কী ধরনের ত্রুটি কিংবা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে তা আমরা নোট করেছি। পরে চিঠির মাধ্যমে মার্কেট সমিতি এবং জেলা প্রশাসক তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি।

দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা না মানলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাসহ অন্যান্য শাস্তির আওতায় আনা হবে।