মোঃ সিরাজুল মনির,  দেশ প্রতিক্ষণ চট্রগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বহুতল ভবনগুলোর সার্ভে শুরু করেছে সিডিএ । অগ্নি ঝুঁকিতে থাকা বিশেষ করে যেসব ভবনে রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেগুলোর প্ল্যানসহ অন্যান্য সংস্থার অনুমোদনের কাগজপত্র তলব করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি অথরাইজড জোনের নেতৃত্বে গত ৪ই মার্চ থেকে এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে প্ল্যান বাতিল এবং উচ্ছেদসহ প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ঢাকার বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির পর আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং বহুতল ভবনগুলোতে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলার ব্যাপারটি আলোচনায় আসে। চট্টগ্রামেও একই ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট পরিচালিত হচ্ছে। এসব ভবনে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে কিনা, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা, সিডিএ থেকে বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন নেওয়া আছে কিনা, প্রভৃতি বিষয় সামনে উঠে আসে। ঢাকায় ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বন্ধ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামেও যেসব ভবনে রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেগুলোতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ইকুইপমেন্ট, বিকল্প সিঁড়িসহ অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার ব্যবস্থা আছে কিনা তা দেখা হবে।

চট্টগ্রাম নগরে সিডিএর অনুমোদন নিয়ে মোট ভবন নির্মিত হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১১টি। এর মধ্যে ১ তলা ভবন রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৫টি, ২ থেকে ৫ তলা উচ্চতার ভবন রয়েছে ৯০ হাজার ৪৪৪টি, ৬ থেকে ১০ তলা উচ্চতার ভবন রয়েছে ১৩ হাজার ১৩৫টি। ১১ তলা থেকে ১৫ তলা ভবন রয়েছে ৪৩১টি, ১৬ তলা থেকে ২০ উচ্চতার ৮৬টি, ২০ তলা থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ তলা উচ্চতার ভবন রয়েছে ১০টি।

সিডিএ ৫ তলার নিচের ভবনগুলোর ব্যাপারে এখন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ৬ তলা থেকে ৩৩ তলা উচ্চতার ভবনগুলোর ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এসব ভবনের অনেকগুলোতে রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে রেস্টুরেন্ট। বাণিজ্যিক ভবনে রেস্টুরেন্ট রয়েছে অসংখ্য। রেস্টুরেন্ট পরিচালনার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন সেগুলো খুব কম সংখ্যক রেস্টুরেন্টই পূরণ করেছে বলে সিডিএ অভিযোগ পেয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সিডিএ নগরীর বহুতল ভবনগুলোর অগ্নিঝুঁকির ব্যাপারে সার্ভে শুরু করেছে। সিডিএর দুজন অথরাইজড অফিসারের নেতৃত্বে পৃথক দুটি জোনে বহুতল ভবনে সার্ভে পরিচালিত হচ্ছে। যেসব ভবনে রেস্টুরেন্ট পরিচালিত হচ্ছে সেগুলোতে সার্ভে করা হচ্ছে। ভবনটি অনুমোদিত কিনা, অনুমোদনপত্রের শর্ত মানা হয়েছে কিনা, যেভাবে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে সেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে কিনা, ভবনের আবাসিক অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা,

ফায়ার সার্ভিস যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলো অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ভবনগুলোতে আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এসব ভবনের প্ল্যানসহ যাবতীয় কাগজপত্র তলব করা হচ্ছে। যেসব ভবনের অননুমোদিত ব্যবহার বা অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে না সেগুলোর ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ কে বলেন, আমাদের দুজন অথরাইজড অফিসারের নেতৃত্বে সার্ভে শুরু হয়েছে। যেসব ভবনে রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি। গরমিল পেলে প্ল্যান বাতিল করে পুরো ভবনকে অননুমোদিত হিসেবে ব্যবস্থা নেব। অননুমোদিত অংশ ভেঙে ফেলব। আমরা তালা ঝুলানোর লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি না। অননুমোদিতভাবে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হলে সেটি উচ্ছেদ করব। সার্ভে শেষ হতে ৭/৮ দিন লাগতে পারে। এরপরই কঠোর পদক্ষেপ নেব।

ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বহুতল ভবনগুলো আমাদের কাছ থেকে ফায়ার সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় বিভিন্ন শর্ত দিয়ে থাকি। এই শর্তগুলো পূরণ না করলে লাইসেন্স কার্যকর থাকে না। সিডিএর পাশাপাশি আমরাও অনুসন্ধান করব। যাদের কাছে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।