দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড রফতানিমুখী জুতা তৈরির কোম্পানি। ২০১৭ সালে একটি রপ্তানিমুখী কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার। গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজস্ব কারখানায় শৈল্পিকভাবে জুতা তৈরির জন্য বিশ্বখ্যাত ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রিমিয়াম মেশিন এনে স্থাপন করা হয়েছে।

উন্নতমানের চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য ইতালি, জার্মানি ও চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তা নিচ্ছে কোম্পানিটি। বাংলাদেশ ছাড়াও ইতালি ও চীনের সেরা এবং অভিজ্ঞ ডিজাইনাররা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জুতার নকশা করছেন।  এশিয়ার অন্যতম সেরা কয়েকটি অনুমোদিত ট্যানারি থেকে প্রতিষ্ঠানটি জুতা তৈরির চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। তবে কোম্পানিটির দুটি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে ইউনিট-১ থেকে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। আর ইউনিট-২ থেকে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে, যা থেকে কোম্পানির মোট রেভিনিউর প্রায় ৯৭ শতাংশ আসে।

কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ হিসাববছরে পণ্য বিক্রি থেকে ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের আয় হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। পণ্য উৎপাদন ব্যয় সমন্বয়ের পর মোট আয় হয় ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে এই হিসাববছরে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা নগদ সহায়তা পেয়েছে কোম্পানিটি। ব্যাংকঋণ ও কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ হিসেবে ২০২২-২৩ হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৩৫ পয়সা, যা আগের হিসাববছরে ছিল ১ টাকা ৯১ পয়সা। সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) হচ্ছে ১৬ টাকা ৭২ পয়সা

আমাদের মাত্র ৩৫ জন কর্মী নিয়ে শুরু করা এই কোম্পানিটিতে বর্তমানে প্রায় এক লাখ বর্গফুটের একটি কারখানায় প্রায় ৮০০’র বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করছেন। এখানে এই কারখানা থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জোড়া জুতা রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক তালিকায় রয়েছে বাটা, হাশ পাপিস, ওন স্প্রিন্ট, ক্লনডিকে, টাটা ইতালিয়া, এএম শো কোম্পানি, ইউনিট, ফাইন বয়েজ, প্রাইম্যাডোনা, স্টিভ ম্যাডেন, পেস, সি রেনি, বক্স, ম্যাক্স হ্যারিস, লরেঞ্জো, ফিফথ এভিনিউ, ভেনেজিয়া, প্যারাটো, এক্সিলেন্ট, ডাশা এবং গ্লাউডিও কন্টির মতো বিশ্বের নামকরা সব কোম্পানি।

মুলত পুঁজিবাজার থেকে পাঁচ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে রপ্তানিমুখী চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠান ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিস লিমিটেড। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৫০ লাখ শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিটি স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হবে। পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা, আধুনিকীকরণ, পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণে (বিএমআরই) ২ কোটি টাকা, ব্যাংকঋণ পরিশোধে ১ কোটি টাকা, কার্যকর মূলধন ব্যবস্থাপনায় ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনায় ৪৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে।

কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে গ্রিন ডেলটা ক্যাপিটাল লিমিটেড। ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেডের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) আবেদন গ্রহণ শুরু হচ্ছে আগামী ২১ এপ্রিল। এক্সচেঞ্জের ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমের মাধ্যমে শেয়ার সাবস্ক্রিপশন আবেদন ওইদিন শুরু হয়ে চলবে ২৫ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

মুনাফার ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাত হোসেন সেলিম দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, আমরা এরইমধ্যে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সক্ষমতা আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি ঘণ্টায় ৭৫-৮০ জোড়া জুতা উৎপাদন হচ্ছে, যা শিগগিরই বাড়িয়ে ৯০ জোড়ায় উন্নীত করা হবে।

উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধেই পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। একইসঙ্গে কাঁচামাল সংগ্রহে অভ্যন্তরীণ উৎস বাড়ানো হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় কমবে। নতুন বাজার খোঁজার কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। বিদ্যমান বাজারের পাশাপাশি নতুন কয়েকটি দেশেও উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে ক্রাফটসম্যান। গুণগতমানের কারণেই ক্রাফটসম্যানের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা রয়েছে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদাত হোসেন সেলিম আরো বলেন, পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্ত হলে দেশ এবং দেশের বাইরে ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়বে। যেহেতু আমাদের মূলধন ছোট, এ কারণে আমরা প্রথমে এসএমই প্লাটফর্মে আসতে চাইছি। কয়েক বছর সেখানে থাকার পর আমরা পুঁজিবাজারের মূল প্লাটফর্মে যাবো।

তাছাড়া দেশের বাইরে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্রহণযোগ্যতা বেশি এবং একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করে। মূলত এ দুই কারণেই আমরা পুঁজিবাজারে আসতে চাইছি। আমাদের উপর আস্থা রাখুন, আমরা আপনাদের আস্থার মর্যাদা রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।