দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সংরক্ষিত বন রক্ষার দায়িত্বে বন বিভাগ, অথচ এই বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজনের তত্ত্বাবধানেই উজাড় হয়ে যাচ্ছে বন। সংরক্ষিত বন এলাকার দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বন বিভাগের মাঠের কর্তারা। বনের কাঠ বেচাকেনা, বছর-চুক্তিতে খাল লিজ দেয়া, মাসোহারার বিনিময়ে লাইসেন্স বিহীন করাতকল চালুর রাখায় সহায়তা করাসহ বহুমূখী উপার্জনের পথ তাদের। বন বিভাগের এই সাম্রাজ্যে জিম্মি সাধারণ মানুষ।

চট্টগ্রামের পেকুয়া উপজেলায় নির্বিচারে পাহাড় ও টিলা কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পেকুয়া উপজেলায় পা পড়তে না পড়তেই কানে আসে বন বিভাগের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। মুলত বনকেন্দ্রিক সব কর্মকাণ্ডেই বন বিভাগের জন্য ‘বাড়তি রোজগারের’ পথ খোলা। বনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পাস পারমিটের ব্যবস্থা আছে ঠিকই, তবে তা একেবারেই কাগজে-কলমে। ফলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হকের হাতে টাকা ধরিয়ে দিলেই মিলছে পাহাড় কাটার অনুমতি। এতে গত ছয় মাসে বারবাকিয়া, শিলখালী ও টইটং এলাকার প্রায় ৮-১০টি পাহাড়-টিলা বিলীন হওয়ার পথে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টইটং ইউনিয়নের ডেনারছড়া, রমিজপাড়া ও বটতলী জুমপাড়ায় চারটি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে দিয়েছে স্থানীয় মো. সোহেল, আবু ছালেক, আকতার, গিয়াস উদ্দিন ও ফারুকের নেতৃত্বে একটি চক্র। এজন্য রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হককে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছে পাহাড়খেকো চক্রটি।

এ ব্যাপারে টইটং ইউনিয়নের বাসিন্দা মোশারফ আকতার বলেন, ডেনারছড়া, রমিজপাড়া ও বটতলী জুমপাড়া পাহাড়গুলো কাটার জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তাকে নিয়মিত টাকা দিয়ে আসছে আবদু শুক্কুর ও কাজল সওদাগরের নেতৃত্বে মাটি ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট। রেঞ্জার এসব অবৈধ লেনদেন করে থাকেন টইটং বিট কর্মকর্তা জমির উদ্দিনের মাধ্যমে।

টইটং ইউনিয়নের মতো শিলখালীর জারুলবনিয়া, নাপিতেরচিতা, সবুজ পাড়া, সাপেরগারা, মাঝেরঘোনা, তারাবনিয়া, বারবাকিয়ার লম্বামোড়া, ভারুয়াখালী, পাহাড়িয়াখালী ও চাকমার ঢুরি এলাকায়ও অবাধে চলছে টিলা ও পাহাড় কাটা। জারুলবনিয়ার উত্তর জুম, দক্ষিণ জুম ও সাপেরঘারা এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটে মাটি পাচার করে দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় প্রকাশ্যে এক্সক্যাভেটর দিয়ে টিলা-পাহাড় কেটে ডাম্প ট্রাকে করে মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আলাপকালে স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় একটি চক্র রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবকে ম্যানেজ করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিলা-পাহাড় কেটে সাবাড় করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, কিছুদিন আগে শিলখালী জারুলবনিয়া দক্ষিণ জুম এলাকার জয়নাল আবেদীন, উত্তর জুমে নুরুল আবছার, মাঝেরঘোনা এলাকায় ছাদেক, তারাবনিয়ায় আবদুল হক, সবুজ পাড়ায় জাহাঙ্গীর, বারবাকিয়া ভারুয়াখালী এলাকায় কবির আহমদ, টইটং বনকানন বাজারের উত্তর পাশে জামাল হোসেন, দক্ষিণ পাশে আবদুস শুক্কর ও চেপ্টামুরা এলাকায় কাজল সওদাগর, পাহাড়িয়াখালী এলাকায় মইদুর রহমান ও সাপেরগারা এলাকায় আলী হোছাইন পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করছেন। এলাকাবাসী বারণ করলেও তারা কারও কথা শুনছে না। শোনা যাচ্ছে, রেঞ্জ কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের অর্থে ম্যানেজ করায় তারা পাহাড়-টিলা কাটায় কাউকে তোয়াক্কা করছে না।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হকের ব্যক্তিগত নম্বরে বারবার কল দেওয়া হলেও সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোশারফ হোসেন বলেন, বিষয়টি চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মকর্তাদের তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।