দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ বিএসইসির কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএসইসি সূত্র মতে, এই শেয়ার কারসাজির নের্তৃত্বে ছিলো প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির, এফসিএ। তাকে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সুরাইয়া বেগমকে ৫ কোটি টাকা এবং তুসার এলকে মিয়াকে আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে সীমা অতিক্রম করে দফায় দফায় ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার কিনেছে সাউথইস্ট ব্যাংক। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে কারসাজির চেষ্টা করে ব্যাংকটি, কিছুটা সফলও হয়। প্রতিটি শেয়ারের দাম ঐ সময়ের নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ে ২১৬ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সেরও উপদেষ্টা। আবার সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা জাকির আহমেদ খান ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালক।

আর ওই সময়ে শেয়ার কেনার জন্য বে লিজিংয় অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিএলআই ক্যাপিটালকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় সাউথইস্ট ব্যাংক। বে লিজিংয়ের একজন শেয়ার ধারক রায়হান কবির, যিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের ছেলে। আবার জাকির আহমেদ খানও বে লিজিংয়ের স্বতন্ত্র পরিচালক।

এভাবে বেসরকারি খাতের এ ব্যাংক শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, যার সুবিধাভোগী সরাসরি ব্যাংকটির একাধিক পরিচালক ও তাঁদের পরিবার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে পুরো বিষয়টি উঠে আসে। এরপর সাউথইস্ট ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক তার আদায় করা মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংয়ের ৫ শতাংশের বেশি অন্য কোম্পানির শেয়ার ধারণ করতে পারবে না, যার হিসাব হবে বাজারমূল্যে। আরও বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানির আদায় করা মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কোনো ব্যাংক ধারণ করতে পারবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২১ সালের পরিদর্শনে ধরা পড়ে, সাউথইস্ট ব্যাংক গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ন্যাশনাল লাইফের যে পরিমাণ শেয়ার কেনে, তা আদায় করা মূলধনের ২২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং সর্বমোট মূলধনের ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এরপরও ব্যাংকটি গত বছরের ডিসেম্বরে দফায় দফায় ন্যাশনাল লাইফের শেয়ার কেনে। এর মধ্যে ২২ ডিসেম্বর ১ লাখ ৯৮ হাজার, ২৩ ডিসেম্বর ১ লাখ ৬৭ হাজার, ২৪ ডিসেম্বর ২ লাখ ৪০ হাজার, ২৭ ডিসেম্বর ৩ হাজার ও ২৮ ডিসেম্বর ১ লাখ ৪২ হাজার শেয়ার কেনে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক ও বিমা দুটিই পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। গত জুলাই পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে ন্যাশনাল লাইফের শেয়ার ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ।

সম্প্রতি ব্যাংকটিকে ন্যাশনাল লাইফের শেয়ার ধারণসীমার মধ্যে আনতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি জানায়, ২৩ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে, সীমায় নামিয়ে আনতে আরও ছয় মাস সময় প্রয়োজন। একই সময়ে ব্যাংকটি সীমাতিরিক্ত শেয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কনসালট্যান্টের ০০০৫৩ নম্বর হিসাবে স্থানান্তর করে। যে হিসাবটি সাউথইস্ট ব্যাংকেরই।

এদিকে এশিয়া ইনস্যুরেন্সের ৪১ লাখ শেয়ারও কেনে সাউথইস্ট ব্যাংক। আলমগীর কবির ও রায়হান কবিরের পাশাপাশি সাউথইস্ট ব্যাংকও এশিয়া ইনস্যুরেন্সের শেয়ার ধারক। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাউথইস্ট ব্যাংক গত বছরের মার্চে বিএলআই ক্যাপিটালকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়, যা গত ৭ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। বিএলআই ক্যাপিটাল হলো বে লিজিংয়ের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

বে লিজিংয়েরও একজন শেয়ারধারক রায়হান কবির। নিয়ম অনুযায়ী পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিতে পর্ষদের কাছে তথ্য দেওয়ার কথা থাকলেও তা গোপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতিও নেওয়া হয়নি। বিশেষ তহবিলের অর্থ নিয়ম ভেঙে বিনিয়োগ করায় এর আগে এনআরবি কমার্শিয়াল, প্রিমিয়ার ও এনআরবি ব্যাংককে জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতা পায়নি তারা।