‘অদ্ভুত’ এমন পুঁজিবাজার ৩০ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়নি
মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনে ন্যুব্জ দেশের পুঁজিবাজার। ফলে দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের হাহাকার ততই বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ মানেই লোকসান। যার ফলে পুঁজিবাজারে নজিরবিহীন অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমনকি পুঁজিবাজার থেকে নীরবে প্রস্থান করছেন হাজারো বিনিয়োগকারী। দীর্ঘমেয়াদি মন্দা, আস্থার সংকট এবং ভালো শেয়ারের অভাবে গত ১৪ মাসেই পুঁজিবাজার ছেড়েছেন বা নিস্কিয় হয়ে পড়েছেন ৬২ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী।
‘অদ্ভুত’ এমন পুঁজিবাজার ৩০ বছরের ইতিহাসে দেখিনি যায়নি বলে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ বেড়েছে। তাছাড়া রাশেদ মাকসুদ কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার ১৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখন আস্থা ফেরাতে পারেনি পুঁজিবাজার। বরং আস্থা বিনিয়োগকারীদের যেটুকু ছিল তাও সংকটে পড়েছে। ফলে দিন দিন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক ৫ হাজার ১৯ পয়েন্ট অবস্থান করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে এবং বাজারে ক্রেতার অভাব দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার বড় বিনিয়োগকারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেল প্রেসার দিয়ে নিচে নামিয়ে ফেলছেন বলে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে গত ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন রাশেদ মাকসুদ। দায়িত্ব গ্রহনের পর বিনিয়োগকারীদের আশার আলো দেখালেও বাস্তবে গত ১৪ মাসে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হয়েছেন। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই আর্তনাদ আমাদের বাঁচান, আমাদের পুঁজি শেষ। আর দৈনিক লেনদেনের ধীর গতিতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক ঋণের সুদহার এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজিবাজারের ঝুঁকি এড়িয়ে সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটের মতো নিরাপদ বিনিয়োগে ঝুঁকছেন।
এদিকে পুঁজিবাজারে অংশীজন থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী পর্যন্ত সবাই বলছেন, কেউ ভালো নেই। কারণ শেয়ারের অব্যাহত দরপতনে সবাই বড় অঙ্কের পুঁজি হারিয়েছেন। সরকার বদলের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারে কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। বিদ্যমান সংকটেরও সমাধান হচ্ছে না। যে কারণে দরপতনের একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজার। এতে হতাশা বাড়ছে সর্বমহলে। আগে বিএসইসির একটি অংশ দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন বিএসইসি পরিণত হয়েছে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে। সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা বাজারমুখী নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছরের ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক কমেছে ৭৫৯ পয়েন্ট। মুলত রাশেদ মাকসুদ কমিশন যখন দায়িত্ব নেয় তখন ডিএসই সূচক ছিলো ৫৭৭৮.৬৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে মঙ্গলবার ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৫০১৯.৭২ পয়েন্ট।
আর গত দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সূচক হারিয়ে ৬১৭ পয়েন্ট। গত ৭ সেপ্টেম্বর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই সূচক ছিলো ৫৬৩৬ পয়েন্ট। আর সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে মঙ্গলবার ডিএসইর সূচক ৪১ পয়েন্ট হারিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০১৯.৭২ পয়েন্ট। এখন লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসে চারশত কোটিতে অবস্থান করছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু টানা দরপতন কোন স্থিতিশীল বাজারের লক্ষণ নয়। এছাড়া রাশেদ মাকসুদ কমিশন পুঁজিবাজার স্থিতিশীল আনতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বর্তমান কমিশনের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকায় বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। ফলে পুঁজিবাজার নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা বাড়ছে।



