সুইস ব্যাংকে জমা টাকা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাঞ্চল্যকর তথ্য
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ সালের মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস জানান, সুইস ব্যাংকে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি মিলিয়ে মোট ৩ শতাংশ অর্থ জমা আছে ব্যক্তি পর্যায়ে, আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জমা আছে ৯৭ শতাংশ।
গত ১৬ জুন সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০২২’ শিরোনামে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের সর্বশেষ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরে সুইস ব্যাংকে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে বাংলাদেশিদের টাকা। বাংলাদেশিরা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ বাংলাদেশি ৯৫.৭০ টাকা হিসেবে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের মোট টাকার পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্রাঁ, বা ৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। এই হিসাবে ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। ২০০২ সালে আমানত ছিল মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্রাঁ, দুই দশকে তা বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ।
২০১৭ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০১৮ সালের শেষে এই অর্থের পরিমাণ কমে হয় ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। ২০১৯ সালে এসে দাঁড়ায় ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁতে। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি’র হিসাবে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে থাকে ৭১ হাজার কোটি টাকা।
দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ বলা হলেও পাচার সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এমনকি আমানত হিসাবে কার কত অর্থ আছে, তা-ও জানা যায়নি। সুইজারল্যান্ডের এই তথ্য এমন সময় প্রকাশ করা হয়েছে, যখন সরকার বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে অবৈধ উপায়ে পাচার হওয়া অর্থ যেমন সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও দেশটিতে অর্থ জমা রাখেন। ফলে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের মোট অর্থের মধ্যে বৈধ-অবৈধ সবই রয়েছে। সাধারণত সুইস ব্যাংক অর্থের উৎস গোপন রাখে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন।
সারা বিশ্বের ধনীদের অর্থ গোপনে গচ্ছিত রাখার জন্য বহু দিনের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। যে কারণে প্রচলিত বিশ্বাস-অবৈধ আয় আর কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা জমা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও এক দশক ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক।