আ’লীগের সাবেক এমপি-মন্ত্রীসহ ১৪৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগে ধীরে ধীরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ধরা পড়ছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা। দুদকের জালে ধরা পড়ার আগেই কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন, আবার কেউ আটক হচ্ছেন বিভিন্ন সময়ে। অনেকেই আছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে যারা এখনও গ্রেপ্তার হননি সেই সব মন্ত্রী-এমপি কিংবা তাদের পরিবার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেই উদ্যোগ নিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও দলটির নেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৪৯ ব্যক্তির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখায় পাঠানো হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার ওই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন ১৫ জন সাবেক মন্ত্রী, ৮ জন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ২০ জন সাবেক সচিব ও ৬৪ জন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি)। এ ছাড়া তালিকাটির মধ্যে এমন অন্তত ৮ জন রয়েছেন, যারা গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বা পরে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আরও ৭ জন বিদেশে পালিয়েছেন।
বিগত সরকারের আমলের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও রয়েছে এ তালিকায়। কয়েক দিন আগে একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
তবে পরে ইমিগ্রেশনের পুলিশের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তারা জানান, যাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া রয়েছে, তাদের নামে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তারা দেশ ছেড়ে গেলে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হতে পারেন। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার আওতায় যারা আছেন, তারা আবার বিভিন্ন মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশ ছাড়ার চিন্তা করছেন।
এতে করে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বেগবান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তাদের বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে যদি কোনো ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ মনে করেন, তাহলে তিনি বিদেশে যেতে হলে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত আগস্টে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিছু ব্যক্তির বিদেশে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন যারা: বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার সেই তালিকায় রয়েছেন: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাবেদ পাটোয়ারি, সাবেক ডিআইজি সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, হারুন অর রশীদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান,
শফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, এস এম মেহেদী হাসান, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশীদ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, কবীর বিন আনোয়ার, খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, এম আব্দুল আজিজ, সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন, আব্দুল হালিম, জাকিয়া সুলতানা, মহিবুল হক, নজরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, খাইরুজ্জামান মজুমদার, ডা. খলিলুর রহমান, মোকাব্বির হোসেন ও আকবর হোসেন প্রমুখ।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরও রয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, মেহের আফরোজ চুমকি, মোহাম্মদ এ আরাফাত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম,
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী, উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজি ও মারুফা আক্তার পপি, সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তালিকায় আরও রয়েছেন, জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আজিজ আহমেদ।
যেসব সাবেক এমপি নিষেধাজ্ঞার এ তালিকায় রয়েছেন তারা হলেন- নড়াইলের মাশরাফী বিন মুর্তজা, দিনাজপুর-২ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নীলফামারী-৩ আসনের রানা মোহাম্মদ সোহেল, রংপুর-১ আসনের মসিউর রহমান রাঙ্গা, বগুড়া-৫ আসনের হাবিবর রহমান, নওগাঁ-২ আসনের শহিদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিল, রাজশাহী-১ আসনের ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ আসনের ফজলে হোসেন বাদশা, নাটোর-১ আসনের শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-৩ আসনের জুনাইদ আহমেদ পলক, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের হাবিবে মিল্লাত, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম, পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবীর, পাবনা-৫ আসনের গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেন,
কুষ্টিয়া-৪ আসনের সেলিম আলতাফ জর্জ, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের আলী আজগার টগর, যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদ, মাগুরা-১ আসনের সাইফুজ্জামান শিখর, বাগেরহাট-১ আসনের শেখ হেলাল উদ্দীন, বাগেরহাট-২ আসনের শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, খুলনা-৩ আসনের বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সাতক্ষীরা-১ আসনের মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা-২ আসনের শওকত হাচানুর রহমান রিমন, পটুয়াখালী-২ আসনের সাবেক এমপি আ. স. ম. ফিরোজ, ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন,
বরিশাল-১ আসনের আবুল হাসনাত আবদুলাহ, বরিশাল-৪ আসনের পংকজ নাথ, পিরোজপুর-১ আসনের শ ম রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল-২ আসনের তানভীর হাসান ছোট মনির, জামালপুরের মুরাদ হাসান, ময়মনসিংহ-৫ আসনের কে এম খালিদ বাবু, নেত্রকোনা-২ আসনের আশরাফ আলী খান খসরু, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, মানিকগঞ্জ-১ আসনের নাইমুর রহমান দুর্জয়, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মাহি বি চৌধুরী, ঢাকা-১৬ আসনের ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, গাজীপুর-২ আসনের জাহিদ আহসান রাসেল, নরসিংদী-২ আসনের আনোয়ারুল আশরাফ খান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের নজরুল ইসলাম বাবু,
রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী, মাদারীপুর-১ আসনের নূর-ই-আলম চৌধুরী, শরীয়তপুর-১ আসনের ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-২ আসনের এ কে এম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর-৩ আসনের নাহিম রাজ্জাক, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের মুহিবুর রহমান মানিক, সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান, মৌলভীবাজার-২ আসনের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আবু জাহির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কুমিল্লা-৬ আসনের বাহাউদ্দিন ও কুমিল্লা-১০ আসনের আ হ ম মোস্তফা কামাল, ফেনী-৩ আসনের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, নোয়াখালী-৪ আসনের মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-২ আসনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম. আবদুল লতিফ, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, কক্সবাজার-২ আসনের আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজার-৩ আসনের সাইমুম সরওয়ার কমল।
তালিকায় রয়েছে আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘স্বাচিপ’ নেতা ইকবাল আর্সলানের নাম। পাশাপাশি নানা কারণে আলোচিত শিল্পকলা একাডেমির সাবেক পরিচালক লিয়াকত আলী লাকিও রয়েছেন নিষেধাজ্ঞায়। এ ছাড়াও ব্যবসায়ী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনেরও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ৭ জন সাংবাদিককে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তারা হলেন: জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান, একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়, ডিবিসির মঞ্জুরুল ইসলাম, এটিএন বাংলার জ.ই মামুন এবং পিআইবির সাবেক মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ।