শতাধিক আসনে ভোটে লড়বে বিএনপির তরুণ নেতারা
তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে থেকেই টানা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সেই অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার তাগিদ আছে প্রায় সব মহল থেকে। তবে আগামী নির্বাচন কেমন হবে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে। দুই প্রধান দলের একটি বিএনপি মনে করছে, এবার দলের জন্য পরিস্থিতি অনুকূলে আছে, এমনটা অনেকে মনে করলেও ক্ষমতাকেন্দ্রিক নানামুখী টানাপোড়েনের কারণে নির্বাচনের সময় ও ভোটের পর দলকে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে।
এ কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে তৈরি রাখার পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতিও সেরে রাখার দিকে মনোযোগী হয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপি কী চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, প্রশ্নটি তোলা হয় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক নেতার কাছে।
তাঁরা বলছেন, আগামী নির্বাচন কখন হবে, ভোটের পর নতুন সরকারব্যবস্থায় অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো ভূমিকা রাখতে চাইবেন কি না, এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও আওয়ামী লীগ কী পদক্ষেপ নেবে, আর নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কখন কী কৌশল নেয়, তার ওপর বিএনপির ভোটের কৌশল, প্রার্থী মনোনয়ন ও অন্যান্য প্রস্তুতি অনেকটা নির্ভর করবে।
তবে দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন দল গোছানোর পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটের মাঠ সাজাচ্ছে । আসন্ন নির্বাচনে শতাধিক আসনে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিতে চান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই মধ্যে বিভিন্ন আসনে তরুণ নেতাদের নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে উপযুক্ত সময়ে তিনি প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, এবার সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর জন্য কিছু আসনে ছাড় দেবে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে সমমনা পাঁচটি দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে তাদের নির্বাচনী আসনে কাজে সহায়তার বিষয়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।
এদিকে দল গোছানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এজন্য ঢাকা ছাড়া ৯টি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৯ জন সিনিয়র নেতাকে।
এ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা এবং তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা নিয়ে সারা দেশ সফর করছে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সভাসহ নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন দলের নেতারা। বিএনপি ইতিবাচক কর্মকাণ্ড ও চিন্তাভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ধানের শীষের প্রতীক তুলে দিয়ে কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাতের সব সংস্কার কাজ শেষে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন করতে চায়। তবে বিএনপি অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। যতবারই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন, ততবারই দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছেন। বিএনপি অন্তর্র্বতী সরকারকে সহযোগিতার পাশাপাশি দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি করছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে। নির্বাচনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে যথাসম্ভব দ্রুত সংস্কার সাধন করা এবং নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেওয়া। এটা আগেও বলেছি, সেদিনও (গত বুধবার) আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সংলাপে ডেকেছিলেন, সেখানেও আমরা ভালোভাবে এটা উপস্থাপন করেছি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষের প্রধান চাওয়া হলো সংসদ নির্বাচন করা। জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সরকার পরিচালনাকারী দল। আমাদের নির্বাচনের জন্য আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। আমরা নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত।
বিএনপি ও মিত্র দলগুলোর একাধিক নেতা জানান, জোটগতভাবে হোক আর যেভাবেই হোক, বিএনপি এবার সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন করবে। ইতোমধ্যে সমমনা পাঁচটি দলকে ছয়টি আসন ছাড়ার ঘোষণা দিলেও পরবর্তী সময়ে আরও আসন ছাড়বে বিএনপি। সমমনা দলগুলোকে সর্বোচ্চ ২৫টি আসন ছাড়ার প্রস্তুতি রয়েছে দলটির। নির্বাচনে বিজয়ের পর সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির।
এছাড়া বিএনপির পূর্ব ঘোষণা অনুসারে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার আলোকে নির্বাচনের পর সংসদে উচ্চকক্ষ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, একই ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়াসহ বেশকিছু পরিবর্তন আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী আসনে এখন সক্রিয়। তারা জনসংযোগের পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোয়। জলসা ও তাফসির মাহফিলে অংশ নিয়ে ঐক্য ও শান্তির বার্তা দেওয়ার সঙ্গে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।
যেসব নেতা মাঠ সাজাচ্ছেন তাদের অন্যতম হলেন টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, মিজানুর রহমান সিনহা, মুক্তিযোদ্ধা দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমরানুল হক চাকলাদার, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, যশোর-৩ আসনে সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, পঞ্চগড়-২ আসনে বিএনপির পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ।
এছাড়া নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, নরসিংদী-৫ আসনে প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, ফেনী-৩ আসনে নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক বর্তমানে সদস্য আবদুল লতিফ জনি, নাটোর-১ আসনে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মাদারীপুর-২ আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হক,
জামালপুর-৫ আসনে স্বনির্ভরবিষয়ক সহ-সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে তথ্য ও গবেষণা সহ-সম্পাদক সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, পটুয়াখালী-২ থেকে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, পটুয়াখালী-৩ আসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন, বরিশাল ৪ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক রাজিব আহসান।
মাদারীপুর-৩ আসনে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, নোয়াখালী-১ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন, ঝিনাইদহ-২ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ মজিদ,
ঝিনাইদহ-৪ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সারওয়ার, নেত্রকোনা-২ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক, নেত্রকোনা-৩ আসনে অ্যাব নেতা প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. মামুন বিন আব্দুল মান্নান সক্রিয় রয়েছেন।
এছাড়া টাঙ্গাইল-৩ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম এবং ওবায়দুল হক নাসির, রাজশাহী-৫ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম মোস্তফা, ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ, বগুড়া-৫ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডাইজারি কমিটির বিশেষ সহকারী বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু, নরসিংদী-৫ আসনে জেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেল, মাদারীপুর-১ আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান নির্বাচনের মাঠ সাজাচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিশিষ্ট চিকিৎসক ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকি, দিনাজপুর-২ আসনে জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ, সিলেট-৬ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী ও জেলা বিএনপি নেতা তামিম ইয়াহিয়া আহমদ, পিরোজপুর-৩ আসনে যুবদলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সাবেক সহ-সম্পাদক এ আর মামুন খান,
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বুয়েট ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী সাহাদাত আহমেদ মাসুম, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল, নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা প্রকৌশলী আমিরুল মোমিন বাবলু, জয়পুরহাট-২ আসনে অ্যাব নেতা প্রকৌশলী আমিনুর ইসলাম, সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রকৌশলী মো. আইয়ুব হোসেন মুকুল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে জেলা বিএনপির সদস্য রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পুসহ অনেকেই মনোনয়নের আশায় কাজ করছেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের আত্মার সম্পর্ক। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সব ধরনের জনসেবামূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সব সময়ই এলাকার দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলাম, এখনো পাশে থাকার চেষ্টা করছি।
নোয়াখালী-৫ আসনের বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশনায় তিনি তার এলাকা কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটের মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আসন্ন নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেলে তিনি বিজয়ী হবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না এলে এবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির ভোটের জোট বাঁধার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করেন দলের অধিকাংশ নেতা। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ও দল দাঁড় করাচ্ছে, তার ওপরও নজর রাখছেন বিএনপির ওপরের দিককার নেতারা।
বিএনপির মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হলে স্থানীয় পর্যায়ে পরিচিতি ও জনভিত্তি আছে এমন কোনো কোনো নেতাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিজেদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারে, এমন আশঙ্কাও দেখছেন দলের নেতারা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, এমনটা উল্লেখ করে বিএনপির এক নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নেয়, তার ওপরও ভোটের পরিস্থিতি অনেকটা নির্ভর করতে পারে।
এমন অবস্থায় দলকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করতে সারা দেশে তৃণমূল থেকে ওপরের দিকে সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে মনোযোগী হয়েছে বিএনপি। ঢাকা ছাড়া অন্য আটটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বিভাগের অধীন মহানগর ও জেলাগুলোর সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করতে নির্দেশ এসেছে শীর্ষ পর্যায় থেকে।
এসব সম্মেলন কীভাবে করতে হবে, সে বিষয়েও দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা। গত ২৫ নভেম্বর থেকে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নামে চিঠি দেওয়া শুরু হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা, জেলা ও মহানগর ইউনিটের সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।
প্রতিটি বিভাগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের জন্য দলের একজন করে ঊর্ধ্বতন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সিলেট বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ফরিদপুর (রাজনৈতিক) বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, রংপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরিশাল বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, কুমিল্লা (রাজনৈতিক) বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু,
চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, রাজশাহী বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, খুলনা বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান ও ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। এই ৯ নেতাকে তাঁদের দায়িত্বের আওতাধীন বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক, ক্ষেত্রভেদে মহানগর ও জেলার সভাপতি, আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক, সদস্যসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে অতিসত্বর সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে।
ফরিদপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান রিপন গত বৃহস্পতিবার বলেন, স্থানীয় ইউনিটগুলোয় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাঁরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করবেন, যাতে কমিটিগুলো প্রতিনিধিত্বমূলক হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে দায়িত্ব পাওয়া আহমেদ আজম খান চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি জানান, এ বৈঠকে আগামী ৮০ দিনের ভেতর ছয় জেলার তৃণমূল থেকে অর্থাৎ ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, ওয়ার্ড থেকে পৌরসভা, উপজেলা ও পৌরসভা থেকে জেলা কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।