তারেক রহমানমান্না আতোয়ার,  ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আ’লীগের বাকশালী নীল নকশার একতরফা ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশবাসী স্বত:স্ফুর্ত বর্জন করায় অভিনন্দন জানিয়েছেন । প্রহসনের নির্বাচনকে রুখে দেয়ার মাধ্যমে বাংলার জনগণ একটি লক্ষ্য অর্জন করেছে মাত্র।

এটি চূড়ান্ত কোনো সাফল্য নয়। বিএনপির মূল লক্ষ্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে গণতন্ত্রকামী মানুষের চেতনার প্রতিফলন ঘটানো। সে লক্ষ্যে বিএনপি যতক্ষণ পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারবে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

রবিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে সেন্ট্রাল লন্ডনের ফোর সিজন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ২০০৮ সালের নির্বাচন সবার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থাকার পরও সংসদেও গিয়েছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা অবৈধ সরকার। অবৈধ সরকারের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনকে প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করায় গণতন্ত্রকামী সমগ্র দেশবাসী ও ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের তৃণমূলসহ সকল স্তরের নেতাকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক ভয়ানক এ দুর্যোগকালীন সময় পার করছে, যেখানে ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়ের, সত্যের সাথে মিথ্যার, এবং জনগণের আকাঙ্খার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতার মোহের লড়াই চলছে।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির প্রত্যাখ্যাত করা নির্বাচনের দিন সরকারের নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি সাহসী ১৮ দলীয় জোটের ত্যাগী নেতারা, আহত হয়েছেন অসংখ্য। নির্মম নির্যাতন ও জেল-জুলুমের স্বীকার হচ্ছেন অগণিত মানুষ। সমগ্র বাংলাদেশ যেন আজ এক রক্তের উপত্যকা। রাষ্ট্রযন্ত্রের দমন-নিপীড়নে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের বড় একটি অর্জনের জন্য আর সরকারের চাপিয়ে দেয়া পরাধীনতা, এবং জনগনের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য পরিবার-পরিজন-সহযোদ্ধা হারানোর গভীর কষ্ট বুকে চেপেই রেখেই আন্দোলনকে অব্যাহত রাখতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও তাদের পরিবার সমূহের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আত্মত্যাগের এই স্মৃতিই হবে আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত আন্দোলনের সংগ্রামী প্রেরণা। সেই আত্মত্যাগকে অর্থবহ করে তুলতে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যে কোনো মূল্যে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, চলমান চিকিৎসার কারণে তিনি অতীতের মত রাজপথের আন্দোলনে শরিক হতে না পারলেও তার চিন্তা-চেতনা, ভাবনা-পরিকল্পনার সবকিছুর আবর্তন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ ও চলমান আন্দোলনকে ঘিরেই। নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং আন্দোলনের সাফল্য আমার জীবনীশক্তি। তার শারীরিক অনুপস্থিতি যেন বাংলাদেশী জাতীয়তবাদের এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তারেক রহমান তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গড়া তীব্র আন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতীক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সৈনিক। মনে রাখবেন এই গণআন্দোলনে দেশ ও দেশের বাইরে থাকা প্রত্যেকটি বাংলাদেশির সমর্থন রয়েছে।

বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ও গণমাধ্যম একচ্ছত্রভাবে আমাদের এই মুক্তির সংগ্রামের পক্ষাবলম্বন করছে। তিনি সবাইকে নিজ-নিজ এলাকায় শত প্রতিকূলতার মাঝে হলেও সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যে কোন মূল্যে অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন। ইনশাল্লাাহ পৃথিবীর কোন শক্তির পক্ষে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

দেশ শিগগিরই স্বৈরাচার ও অপশাসন মুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তারেক রহমান বলেন, বিশাল, নিবেদিতপ্রাণ, জনসমর্থিত বিএনপিকে কউ অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই আন্দোলন শুধু আমাদের একার নয়। দেশের রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ স্বৈরাচারীদের উৎখাত চায়। তাই এক চুল পরিমাণ ছাড় না দিয়ে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যান।

প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, যারা ৫ জানুয়ারির কলঙ্কিত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন তাদের দায়বদ্ধতা কি জনবিচ্ছিন সমর্থনহীন সরকারের প্রতি, নাকি নিষ্পেষিত গণমানুষের প্রতি।

দেশের অর্ধেকেরও কম আসনে অনুষ্ঠিত ন্যক্কারজনক নির্বাচনে যখন শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোট পড়ে আর সারা দেশের শতকরা ২ ভাগেরও কম মানুষ যখন ৫ বছরে একবারের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন- সেই ভোটারদের আবার প্রায় সবাই যখন হয় অবৈধ সরকারের জাল ভোটার, দলীয় কর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর সদস্য- তখন দেশের জন্য নেয়া শপথের সম্মানে হলেও আপনাদের উচিত নিজেদের কর্তব্য ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ে নতুন করে ভাবার।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র সরকারি দায়িত্ব পালনের অজুহাতে দেশবিরোধী শক্তির হুকুম তামিলের সুযোগ নেই। কারণ আজ সরকার পক্ষ বলে কিছু নেই। পক্ষ শুধু গণবিরোধী স্বৈরাচারী বনাম দেশের মানুষ। ভেবে দেখুন আপনারা কোন পক্ষে থাকবেন। স্বৈরাচারীদের সূর্য অস্তগামী দেখেও যদি মানুষের পক্ষে থাকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে আপনারা কিন্তু ইতিহাসের পাতায় দায় এড়াতে পারবেন না।

দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিকে, প্রতিটি বাড়িকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, একাত্তরে আমরা দেশকে হানাদারমুক্ত করার যে সংগ্রাম করেছিলাম সে সংগ্রাম ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। আর আজকের এই সংগ্রাম সার্বভৌমত্ব রক্ষার। সেই সংগ্রাম ছিল দেশকে হানাদার-মুক্ত করার। আর আজকের এই সংগ্রাম দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার। তিনি বলেন, দেশটা আমাদের সবার। একে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সবাইকে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে হবে। তা আমরা সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকি, আর নাই থাকি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এমএ মালেক, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম, খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস আশিক ইসলাম, সাংবাদিক সালেহ শিবলী, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ,

যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শরীফুজ্জামান তপন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ মল্লিক, বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন, বাংলাদেশ পলিসি ফোরাম ক্যামব্রিজের প্রেসিডেন্ট ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক মাহদি আমিন, শরীফুল ইসলাম সবুজ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।