পিঠে-পায়েস বরিশাল : শীতের তীব্রতা যতোই বেড়ে চলেছে, ততোই গ্রামীণ জনপদের গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ খেঁজুর গাছ থেকে সু-মধুর রস বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

উচ্চমূল্যে হলেও তা সংগ্রহ করেই গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হয়েছে পিঠা, পায়েস খাওয়ার ধুম। প্রতিটি বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের জন্য জামাই-মেয়ে, নাতি-নাতনী কিংবা নিকট আত্মীয়দের নিয়ে চলছে খেজুর রসের পায়েস, রসে ভেজানো নানান ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম।

এ যেন প্রাচীন জুগের একটি অধ্যায়। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে খেজুর রসের পিঠা, পায়েসের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন।

এজন্য নিকট আত্মীয়দের নিয়ে দু’একবার উৎসবের আয়োজন করা হয়। এবারও তার কোন কমতি নেই।বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার গেরাকুল মহল¬ার গৃহিনী সীমা আহম্মেদ জানান,

প্রতি হাঁড়ি খেজুর রস এক’শ টাকা করে ক্রয় করে আনা হয়েছে। পাঁচ হাঁড়ি খেঁজুর রস ক্রয়ের পর পাশ্ববর্তী বাড়ির ৫/৬জন গৃহনীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানিয়ে তা মৌসুমী খেঁজুর রসে ভিজিয়ে তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রন করা হয়েছে।

উজিরপুর উপজেলার হস্তিশুন্ড গ্রামের গাছি শাহ আলম ডাকুয়া জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় খেঁজুর রস ও তার মিষ্টতাও রেড়ে গেছে। ফলে খেজুর রস দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ।

সকল শ্রেনী ও পেশার মানুষদের কাছেও খেজুর রসের চাহিদা বেড়ে গেছে। তিনি আরো জানান, ২/৩দিন পূর্ব থেকেই রসের জন্য গ্রামের লোকজনে তার কাছে অগ্রীম টাকা দিয়ে রেখেছেন। তিনি প্রতি হাঁড়ি রস এক’শ টাকা করে বিক্রি করছেন। ৭/৮ বছর পূর্বেও এক হাঁড়ি খেঁজুর রস মাত্র ২০/৩০ টাকায় বিক্রি হতো।
সূত্রমতে, যদিও আগের মত খেজুর গাছ না থাকায় এখন রসের দাম অনেকটাই সাধারন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তার পরেও মৌসুমের এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে চাননা কোন শ্রেনী ও পেশার মানুষেরা। তাই গ্রামীণ জনপদে খেজুর রস দিয়ে গৃহবধূদের সুস্বাদু পায়েস, বিভিন্ন ধরনের রসে ভেজানো পিঠা তৈরির ধুম পড়ছে।

খেজুর রসের নলেন গুড় থেকে শুরু করে পিঠা-পায়েসের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠছে গ্রামীণ জনপদ। গ্রামের ছোট ছোট শিশু-কিশোরেরা শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁপতে কাঁপতে ঠান্ডা খেজুর রস খেতেও ভুল করছে না। সূত্রে আরো জানা গেছে, শীতের শুরুতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দক্ষিণাঞ্চলসহ গোটা বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত সময় পার করেছেন। অনেকে শখেরবশে খেজুর গাছকে মধুবৃক্ষ বলে থাকেন।

শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে খেজুর গাছ কাটার প্রতিযোগীতা পড়ে দখিণের গাছিদের মধ্যে। খেজুরের রস আহরণের জন্য এসব এলাকার গাছিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। খেজুর গাছ থেকে রস বের করার জন্য গাছিরা শীতের শুরু থেকে প্রাথমিক পরিচর্যা করে নল লাগিয়ে রস আহরণ শুরু করেন। ওই মধুবৃক্ষর রস দিয়েই চলছে পিঠা-পায়েস খাওয়ার ধুম। বাকেরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সম্পাদক দানিসুর রহমান লিমন জানান, ইট ভাটার আগ্রাসনের কারনে আগের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছকে ব্যবহার করায় বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চল থেকে দ্রুত খেজুর গাছ ফুরিয়ে যেতে শুরু করেছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় যেসব খেঁজুর গাছ ছিলো তা পরিচর্যা করেই গাছিরা রস সংগ্রহ করছেন। গত কয়েকদিনের শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় খেঁজুর গাছে রসও বেড়ে গেছে। আর সেই মধুবৃক্ষের রস উচ্চমূল্যে ক্রয় করে তা দিয়েই এ জনপদের মানুষ এখন খেজুর রসের মজার মজার পিঠে-পায়েস তৈরি করছেন।