তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানোর প্রস্তাব
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা :পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানির অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর জন্য কর ব্যবধান বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। একই সঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর করহার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্মেলন কক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
বর্তমানে ব্যাংক, বিমা, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানি ও মোবাইল ফোন অপারেটর ছাড়া বাকি সব তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন অপারেটরকে দিতে হয় ৪০ শতাংশ কর। ব্যাংক, বিমা, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হলে ৪০ শতাংশ এবং পুঁজিবাজারের বাইরে থাকলে ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা অন্যান্য কোম্পানিকে কর দিতে হয় ৩৫ শতাংশ হারে।
বিসিআই সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব করে বলেন, একটি গতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন কিছু প্রণোদনা। করহার কমানো হলে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহী হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ করার প্রস্তাব রাখেন তিনি।
অন্যদিকে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকার উর্ধ্বে ৩০ শতাংশ কর; মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন তিনি। একই সঙ্গে নন অধ্যাদেশ ১৬বি(এ) ধারা বাতিল করার প্রস্তাব রাখেন তিনি।
আন্ডার ইনভয়েস ও মিস ডিক্লারেশনের মাধ্যমে পণ্য আমদানি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নিয়মিতভাবে মূল্যের খাত ভিত্তিক ডাটা আহরণ এবং সকল বন্দরে স্ক্যানার ও স্বয়ংক্রিয় পরিমাপক স্থাপনের প্রস্তাব করেন আজাদ চৌধুরী।
বাজেটের আকার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটের আকার ৪ বা ৫ লাখ কোটি টাকা হবে বলে ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ভয় পাচ্ছেন। বাজেটের আকার বাড়লে তা ব্যবসায়ীদের ওপর এসে পড়বে। সেজন্য করহার বৃদ্ধি না করে করনেট সম্প্রসারণ করার আহ্বান জানান তিনি।
আগামী বাজেটে নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দেয়া ও করনেট বৃদ্ধি করা হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করনেট বৃদ্ধিতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে করনেট বৃদ্ধি করার কাজ করছি। শুধু ব্যবসায়ী, শিল্পপতি নয় করযোগ্য সবাইকে করের আওতায় নিয়ে আসতে এনবিআর কাজ করছে।
আলোচনা সভায় মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) পৃথক প্রস্তাব করে। তাদের প্রস্তাবে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার কমানোর কথা বলা হয়।
এমসিসিআই এর সহ সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) ৮০ ভাগ করদাতা এ সংগঠনের সদস্য। রাজস্ব বৃদ্ধিতে নতুন মূসক আইন পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা হবে। চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকার একটি বিচক্ষণ বাজেট ঘোষণা করবে।
স্থানীয় শিল্পে কর বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মৌলিক কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের ওপর কর হ্রাস করা হলে দেশিয় শিল্প প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। তিনি আয়করে ২৩, মূসকে ১৪ ও শুল্কে ৩২টি প্রস্তাবনা প্রদান করেন।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিসিআই ও এমসিসিআই এর সদস্য, এনবিআর সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।