চলতি মাসেই পরিদর্শনে আসছে সৌদিভিত্তিক আল শাহিন মেটাল
বিশেষ প্রতিবেদক : ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড। ১৯৮৯ সালে দেশের পুুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এ কোম্পানিটিকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের বেশ আগ্রহ বাড়ছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটিতে সৌদিভিত্তিক একাধিক কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। মুলত, স্টিল স্ট্রাকচার ভবনের যন্ত্রাংশ উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড। এজন্য সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)। এর অংশ হিসেবে বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে খুব শিগগিরই কারখানা পরিদর্শনে বাংলাদেশে আসছে সৌদি ইস্পাত জায়ান্ট আল শাহিন মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ। বিএসইসি ও ন্যাশনাল টিউবসের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল টিউবসে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়ে আল শাহিন মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের একটি প্রতিনিধি দল কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে আগমন করবে। প্রতিনিধি দলটি শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা শেষে ন্যাশনাল টিউবসের কারখানা পরিদর্শন করবে। পরিদর্শন শেষে সব কিছু ইতিবাচক থাকলে বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কোম্পানিটি। তবে সরকার তাদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের ভিত্তিতে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ন্যাশনাল টিউবসের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরবের আল শাহিন নামক একটি কোম্পানি আমাদের এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিএসইসি থেকে কোম্পানিটিকে ন্যাশনাল টিউবসের কারখানা দেখানোর কথা জানানো হয়েছে। তারা কারখানা দেখে যাওয়ার পর সম্ভাব্যতা যাছাই শেষে সিদ্ধান্ত হবে।
ঠিক কবে নাগাদ সৌদিভিত্তিক কোম্পানিটি ন্যাশনাল টিউবস পরিদর্শনে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি মাসের ১৯ থেকে ২৩ তারিখের মধ্যে তাদের আসার কথা রয়েছে। তবে সবকিছুই ফ্লাইট সিডিউল ও তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
জানা গেছে, সৌদি আরবের আল শাহিন মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ সৌদি আরবে প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালে শীর্ষ কোম্পানি। কোম্পানিটি ১৯৭৮ সাল থেকে স্টিল স্ট্রাকচার ভবনের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও রফতানি করে আসছে। সৌদি আরবের বাইরে বেশ কয়েকটি দেশে স্টিল স্ট্রাকচার শিল্পে বিনিয়োগ রয়েছে কোম্পানির।
এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশে আসে সৌদি আরবভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান জামিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেডের গাজীপুরের কারখানা পরিদর্শন করলে বিনিয়োগের জন্য যৌথ উদ্যোগের প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। তবে তারা ন্যাশনাল টিউবসে সরাসরি বিনিয়োগ না করে নিজেদের পণ্য বিক্রিতে ন্যাশনাল টিউবসের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চায়। আর এতে একমতে পৌঁছতে পারেনি সরকার।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৬ হিসাব বছরের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে ন্যাশনাল টিউবস। এ সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ২ টাকা ২৬ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৫ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়। এছাড়া ২০১৪ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
রোববার দিনশেষে ডিএসইতে সর্বশেষ ১৩০.৪০ টাকায় ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ার হাতবদল হয়। দিনভর শেয়ারের দর ১২৮.৬০ টাকা থেকে ১৩২.৮০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। সমাপনী দর ছিল ১৩০.১০ টাকা। এদিন মোট ৭০৬ বারে কোম্পানিটির ২ লাখ ১ হাজার ৬২টি শেয়ার লেনদেন হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর ছিল ১৫৯ টাকা ও সর্বনিম্ন ৭২ টাকা ২০ পয়সা।
জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত ন্যাশনাল টিউবসের কারখানায় বর্তমানে তিনটি ইউনিটের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৪৫ হাজার টন। এর মধ্যে প্রথম ইউনিটে ছয় হাজার টন এপিআই স্টিল পাইপ, দ্বিতীয় ইউনিটে নয় হাজার জিআই পাইপ ও তৃতীয় ইউনিটে ৩০ হাজার টন এমএস পাইপ উৎপাদন করতে সক্ষম।
ব্যক্তিমালিকানায় ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল টিউবস ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় যায়। পরবর্তীতে কোম্পানিটি ১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ২৬ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৫৪৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। মোট ২ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার ১৩৬টি শেয়ারের মধ্যে সরকারের হাতে ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৮.১৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩০.৩১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।