আস্থার প্রতিদান দিচ্ছে ব্যাংক
ফয়সাল মেহেদী : সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের ১০টি ব্যাংক। ডিভিডেন্ড ঘোষিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশরই মুনাফার পাশাপাশি ডিভিডেন্ডের হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ফলে প্রত্যাশার সঙ্গে কিছুটা হলেও প্রাপ্তির মিল খুঁজে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার ধসের পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ব্যাংকের শেয়ারদর তলানিতে ছিল। তবে গত ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে এ খাতের শেয়ার বাড়-বাড়ন্তি দেখা গেছে। এ সময়ে প্রায় সবগুলো ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে। এমনকি কিছু কিছু ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে দুই-তিন গুণেরও বেশি। এ খাতে যারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করেন তাদের মূল আগ্রহ বছর শেষে ব্যাংকগুলোর ঘোষিত ডিভিডেন্ড। তাই বেশি ডিভিডেন্ডর আশাতেই বুক বেঁধে ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এবার কোম্পানিগুলোও নিরাশ করেনি তাদের।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে মোট ৩০টি ব্যাংক তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য বিভিন্ন হারে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। বাকীগুলো ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে ডিভিডেন্ড ঘোষিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৫ ব্যাংকের ডিভিডেন্ড আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। তবে কমেছে ৩ ব্যাংকের ডিভিডেন্ড এবং অপরিবর্তীত রয়েছে ১টি ব্যাংকের ডিভিডেন্ড। অপর ব্যাংকটি এবারও ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। অবশ্য ব্যাংকগুলোর ঘোষিত ডিভিডেন্ড বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদন করবেন বিনিয়োগকারীরা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকিং খাতের আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আর্থবছর শেষে এ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ৩.০৭ টাকা। এর আগের সমাপ্ত অর্থবছরে মোট ১৫ শতাংশ (১০ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছর ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছিল ২.৩৬ টাকা। আজ শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২১.১০ টাকা দরে, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এ খাতের ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মোট ৩০ শতাংশ (১০ শতাংশ ক্যাশ ও ২০ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে। আলোচিত বছরের ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫.৪৭ টাকা। এর আগের বছর ২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছর শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৩.২৮ টাকা। আজ শেয়ারটির দর উঠে ৯০.২০ টাকায়, যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এদিকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ৩০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে। বছর শেষে ব্যাংকটি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৮.৮১ টাকা। এর আগের সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ৪০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। আলোচ্য বছর শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছিল ১৫.১০ টাকা। আজ এ শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১০৪.৫০ টাকা দরে।
সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড মোট ২৫ শতাংশ (২০ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বছর শেষে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩.৮৬ টাকা। এর আগের সমাপ্ত অর্থবছর মোট ৩৫ শতাংশ (২০ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড দিয়েছিল এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছর ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছিল ৩.৭৩ টাকা। আজ সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৩৩.২০ টাকায়।
এদিকে এবারও ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছর এ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ০.৪১ টাকা। এর আগের বছর শেয়ারপ্রতি লোনসান হয়েছিল ০.২১ টাকা। আজ সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৪.৯০ টাকা দরে।
এ খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মোট ২০ শতাংশ (১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচ্য বছরে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩.০১ টাকা। এর আগের সমাপ্ত অর্থবছর ১২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছর ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছিল ১.৮৯ টাকা। আজ শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৭.৭০ টাকা দরে।
পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মোট ১৩ শতাংশ (৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৮ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচ্য বছরে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১.৫৮ টাকা। এর আগের সমাপ্ত অর্থবছর ১২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছর ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছিল ৩.৩৪ টাকা। আজ শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৪.১০ টাকা দরে।
এ খাতের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে। আলোচ্য বছর শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩.১০ টাকা। এর আগের সমাপ্ত অর্থবছরেও মোট ২০ শতাংশ (১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড দিয়েছিল এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছর এ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছিল ২.৯১ টাকা। আজ শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২২.৮০ টাকা দরে।
এছাড়া স্টান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মোট ১০ শতাংশ (৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে। আলোচ্য বছরে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১.৪৪ টাকা। এর আগের সমাপ্ত অর্থবছর ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছর ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছিল ২.৪৩ টাকা। আজ শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৩.৩০ টাকা দরে।
এছাড়াও ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মোট ২৫ শতাংশ (১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে। আলোচ্য বছরে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩.৯৮ টাকা। এর আগের সমাপ্ত অর্থবছর মোট ১৫ শতাংশ (৭ শতাংশ ক্যাশ ও ৮ শতাংশ স্টক) ডিভিডেন্ড দিয়েছিল এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ওই বছর এ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছিল ৩.২৯ টাকা। আজ শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৮.৮০ টাকা দরে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধ্যাপক আবু আহমদ মনে করেন, ধস পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকিং খাতেরপ্রতি আস্থা হারিয়ে ছিলেন। তবে ইতোমধ্যে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়েছে। এ কারণে এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। আর ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ডে হার বাড়ালে যারা লোকসানে আছেন তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। আশাকরি ডিভিডেন্ড ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগকারীদের নিরাশ করবে না।