foraginমোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন চার গুণের বেশি বেড়েছে। মাঝে মধ্যে বিক্রি করলেও ক্রয়ের প্রবনতা বেশি ছিল। আইনী ও কাঠামোগত সংস্কার এবং স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা পৃথকীকরণ) কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাছাড়া বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বেশি লাভজনক। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অল্প কিছু কোম্পানি ঘিরেই বিনিয়োগ করেন। বাজারে ভালো ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা এবং শেয়ার বাড়লে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে শেয়ার ক্রয়ের হার বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারী মাসের শেয়ার বিক্রির তুলনায় ৫২.৩৬ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেছেন তারা।

আলোচ্য মাসে বিদেশি পোর্টফোলিওতে শেয়ার ক্রয় করেছেন ৪৫৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেছেন ২৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকার শেয়ার। সেই হিসাবে আলোচ্য মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয় বেড়েছে ১৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বা ৫২.৩৬ শতাংশ।

তবে গত ফেব্রয়ারী  মাসের তুলনায় লেনদেন কমেছে বিদেশি পোর্টফোলিওতে। ফেব্রয়ারী মাসে মোট লেনদেন ছিল ৮৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকার। যা মার্চ মাসে এসে লেনদেন হয়েছে ৭৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার। মার্চ মাসে নিট বিনিয়োগ বেড়েছে ১৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার। যা ফেব্রয়ারী  মাসে নিট বিনিয়োগ নেতিবাচক ছিল ৯৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। ফেব্রয়ারী মাসে শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৩৯৩ কোটি টাকার। আর এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৮৮ কোটি টাকার।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বিদেশিরা দেখে শুনে, জেনে-বুঝে শেয়ারে অর্থ বিনিয়োগ করেন। তারা বিনিয়োগের আগে গবেষণা করেন, কোম্পানির তথ্য যাচাই-বাছাই করে শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, নানা সংস্কারের ফলে আমাদের পুঁজিবাজারে প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ২০১০ সালের ধ্বসের পর সিকিউরিটিজ আইন সংস্কার করা হয়েছে। পুঁজিবাজার সংক্রান্ত নানা বিধিমালা নতুনভাবে বিনিয়োগকারীবান্ধব করা হয়েছে। ফলে বাজারে কারসাজির সুযোগ অনেকাংশে কমেছে। এছাড়া বাজারের সূচক আধুনিকীকরণ করার পাশাপাশি লেনদেন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ হয়েছে।

এতে পুঁজিবাজারে স্টক ব্রোকারদের প্রভাব কমেছে। বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও স্টক ব্রোকারদের অনিয়মের কারণে তাদেরকে জরিমানার মুখোমুখি করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে কাজ করছে। তাছাড়া সম্প্রতি সরকার ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট পাশ করেছে। এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ এর ফলে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে। তবে পুঁজিবাজারের স্বার্থে দ্রুত ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু করা দরকার।

মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আমাদের পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা খুব বেশি নয়। যেগুলোও রয়েছে তাদের শেয়ার সংখ্যা খুবই কম। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঘুরেফিরে অল্প কিছু কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করেন। অন্য কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পান না। তাই বাজারে ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

এসব প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এখানে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মৌলভিত্তি সম্পন্ন এসব কোম্পানির বাইরে বিনিয়োগ করেন না। দেশের ভালো বিনিয়োগকারীরাও এ কোম্পানিগুলো ঘিরেই বেশিরভাগ বিনিয়োগ করেন।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের বাইরে অল্প কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে যেগুলোকে খুব খারাপ বলা যাবে না। এছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানিতেই মূলত কারসাজি হয়। তাই বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশের মুনাফামুখী ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

mdডিএসইর এমডি বলেন, ‘পুঁজিবাজার এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ব। আগের চেয়ে বিনিয়োগ শিক্ষা পরিধি বেড়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী অনুধাবন করতে পারছে কোথায় বিনিয়োগ করবেন আর কোথায় করবেন না। পুঁজিবাজারের ওপর কোনো একটা আঘাত এলেও সেটাকে শোষণ করতে পারছে। সূচক বাড়বে, কমবে এটাই স্বাভাবিক। তবে হঠাৎ বড় উত্থান-পতন ভালো বাজারের লক্ষণ নয়। সেই দিক থেকে আমাদের অবস্থা এখন ভালো। এভাবেই চলতে থাকলে পুঁজিবাজার আরো এগিয়ে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা নানা কারনে আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। নানা সংস্কারের ফলে আমাদের পুঁজিবাজারে প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ২০১০ সালের ধ্বসের পর সিকিউরিটিজ আইন সংস্কার করা হয়েছে।