দেশ প্রতিক্ষন, ঢাকা: নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারের টালমাতাল পরিস্থিতিতে পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বিদেশীরা। যে কারণে তারা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছে। নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারে টালমাতাল পরিস্থিতিতে বিরাজ করায় ১৫৪ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন বিদেশিরা।

ডিএসই সূত্রে জানা যায, গত চার মাস ধরে অব্যাহতভাবে কমছে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশীদের বিনিয়োগ। এই সময়ে শেয়ার ক্রয় করার চেয়ে বিক্রয় করতে আগ্রহী ছিল তারা। পুঁজিবাজারে বিদেশিদের পোর্টফোলিও বিনিয়োগ টানা ২ মাস ধরে কমছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাস শেষে বিদেশি পোর্টফোলিওতে বিক্রির পরিমাণ ছিল বেশি। আলোচ্য সময়ে কেনার চেয়ে ১৫৪ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন বিদেশিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

আলোচ্য মাসে বিদেশিরা ২৫৭ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। আর এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেছেন ৪১১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে ১৫৪ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন। আলোচ্য মাসে বিদেশিদের পোর্টফোলিওতে মোট ৬৬৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যা এর আগের মাসে লেনদেন ছিল ৮৭৩ কোটি টাকা।

সেই হিসাবে পোর্টফোলিওতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ২০৫ কোটি টাকা। গত মার্চ মাসে বিদেশিরা ৩৭৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। আর এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেছিলেন ৪৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ওই মাসে ১২৩ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারী মাসে বিদেশি নিট বিনিয়োগ বেড়েছিল ৩২৩ কোটি টাকা। ওই মাসে বিদেশিরা ৫৮৭ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার কিনেছিলেন।

আর এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেন ২৬৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আর জানুয়ারি মাসে নিট বিনিয়োগ ছিল ১৭৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর মাসে শেয়ার বিক্রির পরিমাণও বেশি ছিল। ওই মাসে বিদেশিরা ২৪৬ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার টাকার শেয়ার কিনেছিলেন। আর এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেন ৩৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বরে নিট বিনিয়োগ কমেছিল ১০১ কোটি ৫৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার আগে ওই কোম্পানি সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে নেন। এই ক্ষেত্রে তারা দেশের রাজনীতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখেন। চলতি বছরে বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ার এটি একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় বিদেশীরা। যে কারণে তারা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছে। তাছাড়া নানা ইস্যুতে দেশী-বিদেশী সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা সর্তক থাকেন। তারা অর্থ নিরাপদে রাখতে পছন্দ করেন। যে কারণে তারা ক্রয় করার চেয়ে বিক্রয় বেশি করেছেন। ফলে নিট বিনিয়োগ কমে গেছে। এছাড়া বিদেশীরা বিনিয়োগ করার সময় ভাল মানের কোম্পানি খোঁজেন। আমাদের পুঁজিবাজারে ভালমানের কোম্পানির সংখ্যা সীমিত।

দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে ২০১৭ সালে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ ছিল উল্লেখ করা মতো। তাদের নিট বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা চলতি বছরের জানুয়ারিতেও অব্যাহত ছিল। তবে বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অগ্রীম আমানত অনুপাত (্এডিআর) কমানোকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি যে অস্থিরতা তৈরী হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে পুরো পুঁজিবাজারের লেনদেনে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদেশীরাও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে বাজার পরিস্থিতিতে অস্থিরতা তৈরী হয়েছে।