মাস পেরোলেও মেস ভাড়ার কোন সমাধান করতে পারেনি জবি প্রশাসন
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০২০-০৭-১২ ৮:০৭:৪৫ অপরাহ্ন
এম এ সাঈদ চৌধুরী, জবি: করোনায় বাসা ভাড়া নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে দেশের একমাত্র অনাবাসিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। উচ্চশিক্ষা লাভের তাগিদে একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী মেস ভাড়া করে ঢাকায় থাকেন, যাদের নেই ন্যুনতম আবাসন সুবিধা। করোনা পরিস্থিতিতে সবধরনের ইনকামের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন এই শিক্ষার্থীরা। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তাগিদে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের এই চরম সংকট তৈরি হলেও নীরব ভুমিকায় রয়েছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দায়সারা কিছু সাহায্য-সহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সংকট নিরসনে একটি কমিটি গঠনের এক মাস পার হলেও যার ফল এখনো পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, করোনায় শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া সংকট দেখা দেয় গত মে মাস থেকে। বাড়িওয়ালাদের বিভিন্ন হুমকির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও হয়রানি বাড়ে শিক্ষার্থীদের। এরপর গত ১০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠনের ১৯ নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থীদের করোনায় সংকটকালীন শিক্ষাবৃত্তির দাবি জানায়। পরদিন ১১জুন শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দও মৌখিকভাবে শিক্ষাবৃত্তির দাবি জানায়। দাবির প্রেক্ষিতে ১৩ জুন সংকট নিরসনে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদকে নিয়ে এক সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটি গঠনের ২৩ দিন পর গত ৭ জুলাই শিক্ষাবৃত্তির প্রস্তাব দিয়ে প্রস্তাবনা দেয় তদন্ত কমিটি। যার এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।
এদিকে ৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল বাকি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন। যেখানে মেস ভাড়া সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে একটি ফরম সংগ্রহ করতে বলা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সমালোচনার মুখে তাৎক্ষণিক বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ২৫ জুন শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত ৫ দফা দাবি জানান শাখা ছাত্রলীগ। তাদের দাবি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন, তাদের মালপত্র সরাতে মাঠে সক্রিয় কাজ করে আসছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্পষ্ট কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় গত ৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের ৫ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অনশনে বসেন। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সময়ক্ষেপণের মধ্যে মেস ভাড়া সংকটে চরম অনিশ্চয়তা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেস ভাড়া নিয়ে বাড়ি মালিকদের হুমকির মুখে বাসা ছাড়ছেন তারা। বাসা ছাড়তে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। বাসার মালপত্র রাখা ও বহন করতে বাড়তি ঝামেলায় পড়ছেন। সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মালপত্র রাখতে বিভিন্ন বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুমতি না পাওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিস থেকে পাশ্ববর্তী থানায় সহযোগিতার কথা বললেও পুলিশ প্রশাসনের সাড়া মিলছে না।
এবিষয়ে সংকট নিরসন কমিটির একমাত্র সদস্য মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুর মোহাম্মদ জানান, আমাকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে, আমি শিক্ষাবৃত্তির প্রস্তাবনা দিয়ে রিপোর্ট সাবমিট করেছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে। শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে এই প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। যার কারণে সময়ক্ষেপণ হয়েছে বেশি। আমি বলেছি আগের চেয়ে দশগুণ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়ার জন্য, যার সময়কাল হবে এক বছর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, কমিটি একটা রিপোর্ট সাবমিট করেছে সেটা আমি উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি, তিনি দেখে ব্যবস্থা নিবেন। পরবর্তী কোনো একাডেমিক মিটিং হলে সেখানে এটি উপস্থাপন করা হবে তারপর সবাই মতামত দিবেন। শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান এই সংকট নিরসনে জরুরি সভা করা যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জরুরি সভা অবশ্যই করা যায়, যেহেতু শিক্ষার্থীদের সমস্যা প্রতিদিনই বেড়েই চলছে। তবে এর এখতিয়ার শুধুমাত্র উপাচার্যের। তিনি এর সিদ্ধান্ত নিবেন।
বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানা যায়, উপাচার্য মীজানুর রহমান সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে শিক্ষার্থীদের ফকির-মিসকিন নামে বেফাঁস মন্তব্যের পর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন সাংবাদিকদের অনেকের মোবাইল নম্বর ব্লক লিস্টে রেখেছেন ও অনেকের ফোন না ধরে কেটে দেন।