দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের স্বল্প মূলধনি কোম্পানি বঙ্গজ লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক রবিউল হক ঘোষণা না দিয়ে নিজ কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। এরপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ধরে ফেলাতে তার ধান্দাবাজি ফাঁস হয়ে যায়। ডিএসইর কাছে ধরা পড়ায় রবিউল হক ক্ষমাও চেয়েছেন; কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তথ্য-প্রমাণাদিসহ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসির কাছে পাঠিয়েছে ডিএসই। তবে বিএসইসি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম গতানুগতিক ভাষায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ডিএসইর লিস্টিং রেগুলেশনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির মালিক বা উদ্যোক্তা বা পরিচালক নিজের কোম্পানির শেয়ার কিনতে বা বিক্রি করতে চাইলে আগে সেটা স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসিকে জানাতে হবে। এরপর স্টক এক্সচেঞ্জ সেটি ঘোষণা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জানাবে। তারপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘোষিত শেয়ারের লেনদেন করবে।

তবে বঙ্গজের উদ্যোক্তা রবিউল হক গত ২৩ জুন আগাম ঘোষণা ছাড়াই নিজ কোম্পানির ২ হাজার শেয়ার ১৩৮ টাকা ৫০ পয়সায় ক্রয়াদেশ দেন ডিএসইর সদস্য ব্রোকারেজ হাউস রাজ্জাক সিকিউরিটিজের মাধ্যমে।

তারপর রবিউল হকের শেয়ার কেনা হয়ে গেলে খবর চলে যায় ডিএসইর কাছে। শুরু হয়ে যায় তদন্ত কার্যক্রম। ডিএসইর তদন্তে বঙ্গজের উদ্যোক্তা রবিউল হক ও রাজ্জাক সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তদন্ত চলাকালে রবিউল হক আইনটি জানতেন না বলে ডিএসইকে লিখিত বক্তব্যে জানান। এবার ছাড় দেওয়ার অনুরোধ করে বলেন, ভবিষ্যতে আর এমন ভুল করবেন না।

ডিএসই তদন্ত দল অভিযোগ এনেছে রাজ্জাক সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধেও। ব্রোকারেজ হাউসটিতে রবিউল হক বিও হিসাব খোলেন ২০০৪ সালে। তিনি যে বঙ্গজ ও মিথুন নিটিংয়ের উদ্যোক্তা পরিচালক, তা উল্লেখ করেননি। যদিও হাউসটি রবিউল হকের পরিচয় জানত। এতে হাউসটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০-এর ৫-এর ২-এর ই ধারা ভেঙেছে বলেও মনে করে ডিএসইর তদন্ত দল। এই আইনে বলা আছে, কোনো বিও হিসাবধারী যদি কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালক হন, তাহলে বিও অ্যাকাউন্ট করার সময় সেই তথ্য রাখতে হবে; যেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্জাক সিকিউরিটিজ।

ব্রোকারেজ হাউসটির পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘রবিউল ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে আমাদের হাউসে অ্যাকাউন্ট খোলেন। তখন ফরমে তাদের দেওয়া তথ্য আমাদের বিও ওপেনিং ফরমে ছিল না। পত্র পাওয়ামাত্র আমরা হালনাগাদ করব।’ রাজ্জাক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আবদুর রহিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমরা জবাব দিয়েছি। রবিউল হক আইনটি জানতেন না। তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’

জানা যায়, গত মাসে ডিএসই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে পাঠায়। তবে এখন পর্যন্ত সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ১৯৮০ সালে উৎপাদনে আসা বঙ্গজ তাদের গ্র্যান্ড চয়েজ বিস্কুট দিয়ে বাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। চার বছর পর তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তবে এখন তাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না।

স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ’২১-মার্চ ’২২) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) করেছে ১৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১১ পয়সা। গত বছর ২০২১ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছর ইপিএস হয়েছিল ২৩ পয়সা।

বঙ্গজের পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার রয়েছে ৭৬ লাখ ২৪ হাজার ৬৪৩টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬৩ দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ার।