দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: তথ্য প্রযুক্তি খাতকে বীমা সেবায় সম্পৃক্ত করতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এটি বাস্তবায়ন হলে ইন্স্যুরটেক প্লাটফর্মের মাধ্যমে দেশের বীমা খাতে উদ্ভাবনী ধারণা প্রবর্তন হবে। যা বীমা খাতের সুশৃঙ্খল বিকাশ এবং গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষণে সহায়তা করবে। এরই মধ্যে উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স গাইডলাইন্স, ২০২৩’ এর খসড়া প্রস্তুত করেছে। গাইডলাইনটি চূড়ান্ত করতে গত বৃহস্পতিবার অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করেছে দেশের বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গাইডলাইনটি চূড়ান্ত করার আগে এটিকে আরো বাস্তবমুখী করতে অংশীজনদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন এ বিষয়ে মতামত জানাতে দু’সপ্তাহ সময় চেয়েছে। সংগঠনটির মতামত পেলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পুনরায় বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হতে পারে।

আইডিআরএ বলছে, দ্রুত বিকাশমান তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বীমা গ্রাহকদের নতুন পরিকল্প এবং দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে বীমা সেবা পাওয়ার জন্য তাদের চাহিদায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও, বীমা শিল্পে উদ্ভাবনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ইন্স্যুরটেক প্লাটফর্মের মাধ্যমে বীমা খাতে উদ্ভাবনের সুযোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বর্তমান সময়ে ইন্স্যুরটেক বা স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যারা উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বীমা খাতের সুশৃঙ্খল বিকাশ এবং বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতকে বীমা সেবায় সম্পৃক্ত করার জন্য ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স গাইডলাইন্স-২০২৩’ জারি করা হচ্ছে।

গাইডলাইনটিতে রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটি এমন ব্যবস্থা যাতে নতুন ব্যবসায়িক ধারা সৃষ্টির লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন বীমা পরিকল্প বা সেবা উদ্ভাবনের জন্য পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনার সৃষ্টি হবে যা বিদ্যমান বিধি-বিধান দ্বারা সমর্থিত বা প্রচলিত বিধি-বিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে।

নতুন এই গাইডলাইন্স ৪ ধরণের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সেগুলো হলো- কোন বীমাকারী; কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান; কোন ইন্স্যুরেটক বা স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান; এবং কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। রেগুলেটরি স্যান্ডবক্সে আবেদনের শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে: বাংলাদেশের বীমা শিল্পে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বাস্তবায়নে নির্ধারিত যে কোন এক বা একাধিক শ্রেণিতে অনুমোদন প্রদানের জন্য ইন্স্যুরেটক বা স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে পারবে।

আবেদনের শ্রেণিবিভাগের মধ্যে রয়েছে- বীমা পরিকল্প উদ্ভাবন; বীমা পণ্য বিপণন (ই-কমার্স সহ); বীমা দাবি নিষ্পত্তির সেবা প্রদান; অবলিখন; এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন শ্রেণির বীমা সেবা।

রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে কাজ করার অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব মানদন্ড বিবেচনায় নেয়া হবে: কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে এবং দেশের বীমা শিল্পের জন্য তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবন উপকারী হলে; তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবন বীমা গ্রাহকদের স্বার্থে করা হলে; একটি নিরাপদ ও সংরক্ষিত ব্যবস্থার মাধ্যমে বীমায় অন্তর্ভূক্তি এবং বীমার পেনিট্রেশন বৃদ্ধি পেলে; এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত অন্যান্য শর্তাদি পূরণ করলে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ ব্যতিত কোন তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্স্যুরেটক বা স্টার্ট-আপ বীমাকারীর সাথে বীমা পণ্য বা বীমা সেবা প্রদানের কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবে না। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদন দুই বছরের জন্য বলবৎ থাকবে। তবে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে নির্ধারিত শর্তে প্রদত্ত অনুমোদনের সময় বর্ধিত করতে পারবে।