বরিশাল ব্যুরো, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ল্যাম্পপোস্টগুলো পরিচর্যা ও সংস্কারের অভাবে আলোর স্বল্পতায় পড়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধান প্রধান সড়কের অনেক বাতি নষ্ট হয়ে গেলেও সংস্কারের কোনো নামগন্ধ নেই। বছরের পর বছর ল্যাম্পপোস্টগুলো সংস্কারের অভাবে সন্ধ্যা নামলেই ভূতের বাড়িতে পরিণত হয় ক্যাম্পাস।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে যাওয়ার পথে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। ভিসি গেট সংলগ্ন প্রধান সড়ক ও কেন্দ্রীয় মাঠ সংলগ্ন সড়কের কয়েকটি বাতি নষ্ট হয়ে নিভু নিভু করছে৷ একই চিত্র দেখা যায়, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সংলগ্ন রাস্তায়, বঙ্গবন্ধু হলের রাস্তাসহ, মন্দিরের সামনের মোড়ে। তাই সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।

শিক্ষার্থীরা জানান, রাস্তায় চলাচলের সময় বিভিন্ন সাপের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে রাস্তার কিছু অংশ অন্ধকার আবার কিছু অংশে স্বল্প আলো থাকায় টর্চ জ্বালিয়ে চলতে হয়৷ বাতিগুলো সংস্কার করলে এ সংকট থেকে নিস্তার পাওয়া যেত।

প্রকৌশল দপ্তরের ভাষ্যমতে, লোকবল সংকটের কারণে তাদের কাজের সমস্যা হচ্ছে। লাইনম্যান না থাকায় বাইরে থেকে এনে কাজ করাতে হচ্ছে, মাত্র দুজন ইলেকট্রিশিয়ানের মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাসের কাজ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার পাশে পাঁচ ফুট লম্বা পদ্মগোখরা সাপের দেখা মিলেছে৷ এছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় রাতে সাপের অবাধ চলাচল করতে দেখেছে শিক্ষার্থীরা। বৃস্পতিবার বঙ্গবন্ধু হলের শৌচাগারে আরেকটি সাপের দেখা মেলে যা নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ এসময়ে আলো সংকট শিক্ষার্থীদের মনে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

এ নিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সায়ফুল্লা আল বায়জীদ বলেন, ইদানীং ক্যাম্পাসে সাপের উপদ্রব অনেক বেশি বেড়েছে৷ এমনকি আবাসিক হলেও তাদের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে, যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাছাড়া সন্ধ্যার পরে ক্যাম্পাসের অনেক পয়েন্টে বাতির অভাবে অন্ধকারাছন্ন থাকে। আমরা সবসময়ই আমাদের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত থাকি ৷ আমরা এ সকল সমস্যার সমাধান চাই৷

শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, সম্প্রতি ক্যাম্পাসজুড়ে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পরিলক্ষিতদের বেশিরভাগই বিষধর সাপ। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় এবং আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ চলাচলের সড়কগুলোর চারপাশ ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো সময় সাপের আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয়ে আমরা অবাধ চলাফেরা করতে পারছি না। আমি আশা করি প্রশাসন দ্রুত এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আলী রাজ বলেন, ক্যাম্পাস অন্ধকার থাকে প্রশাসনের নজরেই পড়ে না। ছুটির আগেও সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। এদিকে সাপের উৎপাতও বেড়েছে। দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার কে নিবে?

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো মামুন অর রশিদ বলেন, ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আমরা বাতি সংস্কার করেছি৷ কিছু কিছু বাকি আছে৷ আর কিছু কিছু জায়গায় বাতি নেই সেখানে আমরা বাতি দেওয়ার ব্যবস্থা করব। যদি আমাদের আর চারটা সৌর চালিত ল্যাম্পপোস্ট হয় তাহলে হয়ত এই সমস্যাটা আর থাকবে না। এই কাজের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লাইনম্যান যা আমাদের নেই৷ এজন্য কাজের বিলম্ব হয়৷ কারণ আমাদের বাইরে থেকে লাইনম্যান আনতে হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, আলো সংকটের বিষয়টি ছুটির আগেও আমাকে কয়েকজন জানিয়েছে। প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্য আমাদের বিশেষায়িত দপ্তর আছে। তারপরও আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখব৷ এবং এই সংকট দূর করতে অতিশীঘ্রই ব্যবস্থা নিব। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সৌরচালিত ল্যাম্পপোস্টের ব্যবস্থা করতে পারে। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে, আলো স্বল্পতাও দূর হবে।