স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নির্বাচনের পর বিরোধী দল নিয়ে রাজনীতিতে জোড় আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের পর দলগতভাবে সবচেয়ে বেশি ১১টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। সর্বোচ্চ ৬২ আসন পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। তবে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে আসার পর দ্বাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবেন, সেই আলোচনার পালে হাওয়া যোগাচ্ছে আইন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা।

সাধারণ ধারণা হল, আসন সংখ্যায় সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল যাকে নেতা নির্বাচিত করবে, তিনিই বিরোধীদলীয় নেতার আসন পাবেন। তার দলই হবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল। গত দুটি নির্বাচনের মত এবারও ভোটের ফলে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু তাদের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ আসনে দল নিরপেক্ষ প্রার্থীরা জিতে আসায় আলোচনা ঘুরে গেছে। জানা-বোঝার চেষ্টা হচ্ছে তাদের কেউ বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসতে পারবেন কি না। তারা জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দল হতে পারবেন কি না।

আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনত এটা ‘সম্ভব’। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, তারা শপথ নেওয়ার পর এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বসবেন। দশম সংসদেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটবদ্ধ হয়েছিলেন। সাড়ে তিন বছর পর আবার এরা দল বেঁধে আওয়ামী লীগে ফিরেও গিয়েছিলেন। এবারও যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে কাউকে নেতা নির্বাচন করেন, তাহলে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল আর বিরোধীদলীয় নেতা পাওয়ার সুযোগ আর থাকবে না বলেন মনে করেন একাধিক বিশেষজ্ঞ।

তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিরোধী দল গঠন করতে হলে নিয়ম অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে জোট গঠন করতে হবে। টানা দুই মেয়াদে থাকা বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবারও একই ভূমিকায় থাকতে চায়। সংসদে বিরোধী দল হতে ২৫টি আসনের প্রয়োজন জানিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নু বলেছেন, এটা একটা টেকনিক্যাল বিষয়।

বিরোধীদল হতে গেলে সংসদে ২৫ জন এমপির একটি বিষয় আছে। গতকাল বুধবার সংসদে শপথ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ১১টি আসনের জয় নিয়েই সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে ‘নিজেদের দায়িত্ব’ পালন করতে চান চুন্নু।

তিনি বলেন, আমরা কোনো শরিক না। আমরা সংসদে অপজিশনে বসে নিজেদের দায়িত্ব পালন করব। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সংসদে জনগণের পক্ষে যদি ভূমিকা রাখতে হয়, তবে গ্রুপওয়াইজ হওয়া লাগবে, তা তো কোনো কথা না। নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়েই আমরা কথা বলতে পারব বিরোধীদলীয় এমপি হিসেবে। তিনি আরও বলেন, বিরোধী দল গঠন নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা কোনঠাসা সেটা তো বিষয় না। আমরা যে আসন পেয়েছি, সেটি নিয়েই আমরা সংসদে আমাদের ভূমিকা পালন করব।

সংসদে সরকারের সমালোচনা করতে কোনো ‘গ্রুপের প্রয়োজন নেই’ বলে মনে করেন তিনি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, সরকারের বিরোধী ভূমিকায় যেহেতু সংসদে আছি, সেহেতু সরকারের সমালোচনা করা, সরকারের ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া, এটার জন্য গ্রুপ লাগে না, ইনডিভিজুয়ালি আমরা করতে পারি।

গত সংসদে আমি ইনডিভিজুয়ালি অনেক কথা বলেছি। এবারও বলব। এতে তো কোনো বাধা নাই। গ্রুপ থাকলে যে কথা বলা যাবে, তা তো না। এটা হচ্ছে ইচ্ছা ও দায়িত্ববোধ। বিরোধী দলের একজন এমপি, কেউ স্বতন্ত্রে যদিও থাকেন, সে যদি সরকারের ত্রুটি নিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলতে চান, অবশ্যই পারেন।

গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। এবার রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পাওয়ায় সংসদে বিরোধী দলের আসনে কারা থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় নির্বাচনের পর থেকে।

চুন্নু বলেন, আমাদের পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিংয়ে স্বতন্ত্ররা মিলে যদি আমরা ২৫ জন বসতে পারি, তাহলে সেটা সম্ভব। আরও কোনো ফাঁক আছে কিনা সেটা আমরা দেখব। বিষয়টা কী হবে, এখনো সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি। আমরা স্পিকারের সাথে আবার বসব। তারপর আপনাদের পরিষ্কার সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।