আলমগীর হোসেন ও মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি যেন থামছেই না। কি স্থল কি আকাশপথ! সমানতালে চলছে গোলাগুলি। হেলিকপ্টার থেকে করা হচ্ছে গুলি আবার হেলিকপ্টার লক্ষ্য করেও গুলি। একই সঙ্গে মর্টার শেলের বিকট শব্দে কাঁপছে তুমব্রু সীমান্ত। এরই মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে মিয়ানমারের ৯৫ জন বিজিপি (বর্ডার গার্ড পুলিশ) সদস্য।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইনে চলছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই। এই লড়াই ও মিয়ানমার বিজিপির পালিয়ে আসার খবরে সীমান্তে ছুঁটে আসছেন বাসিন্দারা।

ফলে সেই কারণে ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও দৌছড়ি এই ৩ ইউনিয়নের বাসিন্দারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে। একেকটি দিন যাচ্ছে, আর পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক হয়ে উঠছে। গুলির শব্দে সেখানে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সীমান্তের ওপারে প্রবল গোলাবর্ষণের কারণে তুমব্রু-ঘুমধুম এলাকা থমথমে হয়ে পড়েছে।

ভয়ে আতঙ্কে স্থানীয়রা কেউ ঘরের বাইরে বেরোচ্ছেন না। এই সংঘাত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ হলেও কখনও কখনও সেখান থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ও ধানী জমিতে এসে পড়েছে। সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা জুড়ে হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। যার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রবল হচ্ছে। বাড়ি থেকে কেউ বাইরে বের হতে পারছেন না।

এরকম পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিবিরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের ধৈর্য্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা বলেন। অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৭৮ জন সদস্য আজ আমাদের দেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের একটি স্কুলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আলোচনা চালানোর জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া গত রোববার মিয়ানমারের গোলাতে আমাদের দেশের একজন মারা গেছেন, ওদের একজন মারা গেছেন এটা সঠিক। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এদিকে বান্দরবানে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা নাগরিক নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাছিনা বেগম (৫২) ওই এলাকার বাদশা মিয়ার স্ত্রী। এছাড়া নিহত রোহিঙ্গা পুরুষের (৫৫) পরিচয় জানা যায়নি। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে চলমান সংঘর্ষে প্রাণহানি এড়াতে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এ নিয়ে ঘুমধুম সীমান্তের ছয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গোলাগুলির সময় নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু এলাকায় বেশ কয়েকটি মর্টারশেল এসে পড়ে। এতে ওই এলাকার যুদিষ্টি ধরের ছেলে প্রবীর ধর আহত হন।

বিজিবি সূত্র জানায়, গত রোববার ভোর থেকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত এলাকা দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। অন্যদিকে গত রোববার মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় এসে পড়ে। এতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার দুপুরে একটি গুলি এসে পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি সিএনজি অটোরিকশায়। তবে সেই সময় কেউ হতাহত হয়নি।

গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘাত চলছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক। এসব গোলাবারুদ আর বিস্ফোরকের বিকট শব্দে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকা এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কখনো গুলির খোসা আবার কখনো মর্টার শেলের খোসা এসে পড়ছে শূন্যরেখার ওপর।

এতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তুমব্রু, বাইশফাড়ি, ভাজাবনিয়া সীমান্ত পয়েন্টে এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এরই মধ্যে দুটি বাড়ি থেকে লোকজন পালিয়ে গেছে এবং একটি বসতবাড়ির ওপর মর্টার শেলের অংশ পড়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে নিজেদের চাষাবাদের জমিতে যেতে পারছেন না অনেক কৃষক। আবার উৎপাদিত ফসল জমি থেকে তুলতে না পারায় ক্ষেতেই চাষাবাদ করা বিভিন্ন ধরনের ফল-ফলাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ঘুমধুম সীমান্তের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বলেন, বেলা ১২টায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার এসে তুমব্রু রাইট বিওপি ও ঢেকুবুনিয়া ব্যাটালিয়ন এলাকায় মুর্হুমুহু গুলিবর্ষণ করেছে। যা ঘণ্টাব্যাপী চলেছে। আমরা সীমান্তের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছি।

তুমব্রু পশ্চিমকূল সীমান্তে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে কয়েকজন বিজিপি সদস্য। তারা রাস্তায় ফেলে আসে পোশাক। আর সেই পোশাকগুলোতেই মিলেছে তাজা বুলেট। যা সংগ্রহ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পশ্চিমকূল সীমান্তের বাসিন্দা রিয়াদ বলেন, বিজিপির তিন সদস্য বাংলাদেশে পালিয়েছে। তারা কয়েকটি পোশাক রাস্তায় ফেলে যায়। পরে পোশাকে দেখি বেশ কয়েকটি তাজা বুলেট।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য দিল মোহাম্মদ ভূট্টো বলেন, তুমব্রু সীমান্তের তুমব্রু রাইট বিওপি নাকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী দখলে নিয়েছে শুনেছি। পতাকাও টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। এখন বিদ্রোহীরা ঢেকুবুনিয়া ব্যাটালিয়ন দখলে নিতে ব্যাপক গোলাগুলি করছে। মিয়ানমারের ছোড়া গুলিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি ৫ নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আর মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিবিদ্ধ ১৫ সদস্যকে চিকিৎসা দিচ্ছে বিজিবি।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে বাংলাদেশের ২ জন নিহত হয়েছে। এর আগে ভোরে মর্টারশেল এসে একটি বসতঘরে পড়ে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে দেশটির জান্তা বাহিনীর ৫০ সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছেন। আমরা সবাইকে বলেছি কোনো কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে। এ অবস্থায় স্থানীয়দের সরানো হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। আমি কিছু বলতে পারব না। এদিকে সীমান্তে এমন গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে অনেকে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।

তুমব্রুর উত্তরপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল আমিন বলেন, যেভাবে মিয়ানমার থেকে গুলি এ পারে এসে পড়ছে তাতে পরিবার ও নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না। আপাতত উখিয়ায় বোনের বাসায় আশ্রয় নিচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরব। খালেক নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, গতকাল সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এসে শেল পড়েছে। আজ (গতকাল) এক কৃষকের শরীরে। ভোরে বসতঘরে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ নিরাপদ নয়। তাই অন্য জায়গায় যাচ্ছি।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আলম বলেন, আমার ওয়ার্ডের কিছু মানুষ পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। ভোর থেকে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া বলেন, এখানকার পরিস্থিতি এ মুহূর্তে কিছুটা স্বাভাবিক আছে। সীমান্ত এলাকায় কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বিজিবি ও আমরা তৎপর আছি। আতঙ্কিত হয়ে এলাকা ছাড়ার খবর তেমন নেই। তবে ওপারের গোলাগুলির শব্দে এপারে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা।

তবে যোগাযোগ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় অনেকের পক্ষে রাখাইনে তাদের স্বজনের সর্বশেষ অবস্থা জানা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় রোহিঙ্গা বাসিন্দা মো. বাছের জানান, জান্তা সেনারা মিয়ানমারে তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। অনেকে মারা গেছেন। কেউ কেউ আহত হয়েছেন। দিনে ভয়ে কেউ বাড়ি থাকার সাহস করছেন না। পাহাড়ে লুকিয়ে থাকছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর তুমব্রু সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারে ভারী গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারীরা ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে। গুলি ছোড়ার শব্দ শোনার পর জনসাধারণের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সীমান্তের খুব কাছাকাছি বসবাসকারী লোকজনকে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করা হচ্ছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে মর্টারশেলের মতো বিকট গোলাগুলির বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছি।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ চলছে। বিজিবি সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে নতুন করে কোনো অনুপ্রবেশ না ঘটে। ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় গোলাগুলির ঘটনায় ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা জানান, গতরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলির কারণে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ পারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকূল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রোববার একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সীমান্ত এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপদে অবস্থান করার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফরিদুল আলম হোসাইনি জানান, সীমান্তের একশ গজ দূরত্বে থাকা মিসকাতুন নবী দাখিল মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের পর এবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢেঁকিবুনিয়া সীমান্তে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সশস্ত্র সংঘর্ষ চলছে। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে কোণঠাসা হয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

সোমবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রোববার রাতে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্যদের সংখ্যা জানানো হয়েছিল ৬৮ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগের ৬৮ জন সদস্যের মধ্যে ১৫ জনের বেশি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সোমবার ভোর পর্যন্ত নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৭ জনের কতজন আহত, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, গত রোববার দিনভর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। এতে সংঘর্ষের জেরে রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিজিপির ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।

তারা আশ্রয় চাইলে বিজিবি তাদের হেফাজতে নেয়। বিজিবি তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। বিজিপির আহত সদস্যের চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

পালংখালীর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পালংখালী সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তবে সকালের পর নতুন করে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। তবে মানুষের মাঝে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। সোমবার সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তে ২/৩টি গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির দুই সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা আশংকাজনক। বিজিপির চিকিৎসাধীন ওই দুই সদস্য হলেন—রি লি থাইন (২২) এবং জা নি মং (৩০)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে আহত অবস্থায় বিদ্রোহী আরাকান আর্মির ছয় সদস্যকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। আহতরা রাখাইন রাজ্যের বুচিডং, টাংগো এবং ম্রাউ এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ২৪, দুজন ২৩, একজন ২০ এবং বাকি একজন ২২ বছর বয়সী বলে জানা গেছে।

এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তবে তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গত সোমবার সকালে দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি জানান, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বিজিবি তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে আহত ১৫ জন সদস্যকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে মিয়ানমারজুড়ে চলমান সংঘাতের গত তিন দিনে সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর কাছে কয়েকটি সেনা ঘাঁটি এবং ৬২ জন সৈন্য হারিয়েছে জান্তা। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি। দখল হওয়া ঘাঁটিগুলো মিয়ানমারের সাগাইং, ম্যাগউই, মান্দালয় জেলা এবং কাচীন ও কারেন প্রদেশে অবস্থিত।

তবে জান্তা বাহিনীর কতগুলো ঘাঁটি বিদ্রোহীরা দখলে নিয়েছে সেবিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দেশটির জান্তাবিরোধী সশস্ত্র দুই বিদ্রোহীগোষ্ঠী পিপল’স ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ) এবং এথনিক আর্মড অর্গানাইজেশন (ইআও) সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। জান্তার পক্ষ থেকে এখনও এ ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে ইরাববি বলেছে, পিডিএফ ও ইআওর গণমাধ্যম শাখার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে এই সংবাদমাধ্যমটির।