দেশ প্রতিক্ষণ, সাতক্ষীরা: আগে চিংড়ী ঘেরে মাছ মারা গেলে সবাই বলতো ভাইরাস, এখন জানতে পেরেছি খাদ্য, অক্সিজেন ও লবনপানি ঠিকঠাক মতো না পেলে অথবা তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে মাছ মারা যায়’। এমনটাই বললেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চিংড়ী চাষী রিনা রানী মন্ডল।
তিনি আরও বলেন- ঘের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য সবসময় সেখানে থাকতে হতো।

কিন্তু আইওটি ডিভাইস হাতে পাবার পর থেকে এর মাধ্যমেই তিনি ঘেরে কখন কি লাগবে তা ঘরে বসে জানতে পারছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এতে অন্য সময়ের চেয়ে বর্তমানে তার ঘেরে মাছ উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুন।

বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই আইওটি ডিভাইস দেশের মৎস্য উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। শুধু রিনা রানী মন্ডলই নয়, পারুল রানী মন্ডল, নয়ন মন্ডল সহ বেশ কয়েকজন চিংড়ী চাষীও সুখবর শুনিয়েছেন। তারা বলছেন- নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ঘেরের সঠিক পরিচর্যা সম্ভব হচ্ছে। ঘেরের গভীরতা কতটুকু দরকার, পর্যাপ্ত পানি আছে কিনা, লবনে মাত্রা কম না বেশী, অক্সিজেন দেওয়া লাগবে কিনা- এ সবই এই ডিভাইস বলে দেয়। এজন্য তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকঠাক ব্যবস্থা নিলে মাছ মরে না উপরন্তু উৎপাদন বেড়ে যায়।

মৎস্য অধিদপ্তরের এই প্রকল্পটির নাম ‘আইওটি বেজড স্মার্ট অ্যাকোয়াকালচার ফর শ্রিম্প কালচার টেকনোলজি ইনোভেশন, পাইলটিং এন্ড কমার্শিয়ালাইজেশন সাব-প্রজেক্ট’। এতে অর্থায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন সাসটেইনেবল মেরিন এন্ড ফিশারিজ প্রজেক্ট। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

অপর এক চিংড়ী চাষী নীলকান্ত মন্ডল বলেন, অতি শীত বা অতি গরম অথবা কোন প্রতিকূল আবহাওয়ায় মাছ মারা যায়। এটি তারা আগে বুঝতে পারতেন তবে তা অনেক দেরীতে। এখন নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা অগ্রিম তথ্য পাচ্ছেন যা আসলেই সুফল বয়ে এনেছে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: আব্দুল কাইয়ুম বলেন- ‘দেশ বাচাতে হলে আগে কৃষিকে বাচাতে হবে। আর মৎস্য ছাড়া কৃষি হয় না। আর তাই সরকার মাছ উৎপাদনের চতুর্থ বিপ্লব ঘটাতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করতে চায়। উন্নত দেশগুলোতে আরও উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। যেমন রোবটের মাধ্যমে মাছের ক্ষুধা লাগলে খাবার স্প্রে করা, মাছের অসুখ হলে তাৎক্ষণিক তা ছবিতে দেখতে পাওয়া সহ নানাবিধ প্রযুক্তি রয়েছে। ধাপে ধাপে এগুলোও দেশের চাষীদের হাতে চলে আসবে’।

স্মার্ট বাংলাদেশ বানাতে হলে চাষীদেরকেই আগে স্মার্ট হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা মৎস্য অফিসার মো: আনিসুর রহমান। তিনি বলেন- আইওটি ডিভাইসের সুফল ইতোমধ্যেই চাষীরা পেয়েছেন এবং তার সুফল ভোগ করছেন। এর ব্যবহার যত বেশী হবে মাছ উৎপাদন ততই বাড়বে বলে জানান তিনি।

কর্মশালায় উপস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মো: জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন: বেশকিছু ডিভাইস ইতোমধ্যেই চাষীদেরকে দেওয়া হয়েছে। চাষীদের পক্ষে সবসময় ঘের তদারকি করা সম্ভব হয় না। তারা অনেকেই অন্যান্য পেশার সাথেও জড়িত। দূরবর্তী স্থানে থাকার সময় ঘেরের অবস্থা তারা এই ডিভাইসের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছেন। পানির পরিমান কতটুকু আছে, অতিরিক্ত পানি লাগবে কিনা, লবনের মাত্রা কম না বেশী, পানিতে ফাইটোপ্ল্যাংটন(মাছের খাবার) কি পরিমানে আছে, তাপমাত্রা কত আছে এসব তথ্য চাষীরা ঘরে বসে পাচ্ছেন।

নতুন এই প্রযুক্তির সাথে মাছ চাষীদের পরিচিত করাতে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জে সুশীলন গেস্টহাউজে দিন ব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: আব্দুল কাইয়ুম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মৎস্য অফিসার মো: আনিসুর রহমান, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মো: জিয়া হায়দার চৌধুরী ও সরোজ কুমার মিস্ত্রী। দিন ব্যাপী কর্মশালায় অর্ধশতাধিক মৎস্য চাষী অংশ গ্রহণ করেন।