মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মাসের পর মাস টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে পুঁজিবাজার। ফলে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাড়ছে আহাজারী। ঈদের আগে প্রায় আড়াই মাসের লাগাতার দরপতনে লাখ কোটি টাকার বেশি বাজার মূলধন কমে যায়। ফলে পুঁজিবাজারের এমন দীর্ঘ পতনের প্রধান কারণ চরম পর্যায়ের তারল্য ও আস্থা সংকট। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে কোন মতে পুঁজি ফিরত পেলে এ বাজারে বিনিয়োগকারীরা আর আসবে না এমন আহাজারী চলছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। এছাড়া প্রতিদিনই লেনদেন অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমছে। ফলে কমছে মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে ভারী হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমার মাধ্যমে ঈদের পর লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতন হলো।

এমন অব্যাহত দরপতন হওয়ায় বড় ধনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ লোকসান থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় যেন তারা পাচ্ছেন না। শুধু ঈদের পরে নয়, ঈদের আগেও পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়। এমন পতনের কারণে কোনো কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ৬০ শতাংশের ওপরে লোকসানে রয়েছেন।

ঈদের পর টানা চার দিন দরপতনের পেছনে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যবর্তী সংঘর্ষের বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকে। যদিও দেশ দুটির দ্বন্দ্বের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে নেই। তবে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে বলে দাবি করছেন তাঁরা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বর্তমানে পুঁজিবাজারে একটি সংকটের অস্তিত্ব প্রকট। সেটি হলো তারল্যসংকট। এটিই পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক পতনকে ত্বরান্বিত করছে। সুদের হার বেশি হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা সরকারি ট্রেজারি বিল, বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা এফডিআরে যাচ্ছেন।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর পুঁজিবাজারে দরপতনের পেছনে ইরান এবং ইসরায়েল ইস্যু ভূমিকা রেখেছে। ইরান-ইসরায়েল ইস্যুর কারণে অন্যান্য দেশও সাফার করছে। তেলের দাম বেড়ে গেছে। এটার প্রভাব রয়ে গেছে। তবে, এটা (ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা) যেহেতু আর বাড়ছে না, আমরা আশা করছি শিগগির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো যখন আস্থার অভাব থাকে, তখন মূল্যের দিকে বিনিয়োগকারীরা তাকায় না। এটা অন্যান্য দেশেও হয়। আমাদের বাজারে অনেক স্টক আছে, যেগুলো খুবই আন্ডারভ্যালু। আনফরচুনেটলি কেউ এগিয়ে আসছে না। এটা অবশ্য সময় মতো নিজে নিজেই ঘুরে দাঁড়াবে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮৫টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৫৩ পয়েন্টে নেমে গেছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৭৮ কোটি ২৩ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫২২ কোটি ৫১ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৮টির এবং ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৮ কোটি ৫ লাখ টাকা।