দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মার্জিন ঋণ, এর বিপরীতে সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটি এবং নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিএমবিএ) তথ্য সংগ্রহ করে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ডিএসই ও সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএমবিএ’র সভাপতিকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি। নির্দেশনায় বলা হয়, মার্জিন ঋণের বিপরীতে সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটি এবং প্রভিশনের সর্বশেষ তথ্য কমিশনে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার সম্পর্কিত তথ্যও চলতি মাসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এ নির্দেশনার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুটি পৃথক ফরম্যাটে বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—প্রতিষ্ঠানের নাম, ট্রেক নম্বর, মার্জিন হিসাবের নাম, বিও নম্বর, হিসাব খোলার তারিখ, নগদ অর্থ ও শেয়ার আকারে দেওয়া ঋণ, সুদ ও আসলসহ বর্তমান ঋণের পরিমাণ এবং পরিশোধের তথ্য। অপরদিকে দ্বিতীয় ফরম্যাটে সচল বিও হিসাব, মার্জিন ঋণপ্রাপ্ত বিও, নেগেটিভ ইক্যুইটি বিও-এর সংখ্যা, নিট সম্পদ ও প্রভিশনের পরিমাণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বিএসইসি জানায়, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে নেগেটিভ ইক্যুইটি সংকটের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ এবং তার বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা সঞ্চিতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এর আগে, গত ২৪ এপ্রিল বিএসইসি পুঁজিবাজারে মার্জিন অ্যাকাউন্টে সৃষ্ট অনাদায়ী ক্ষতির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৭টি মার্জিন বিও হিসাব থেকে মোট ১৮ হাজার ১২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসই সদস্যদের মাধ্যমে ১১ হাজার ৫৪৫ কোটি, সিএসই সদস্যদের মাধ্যমে ৩৫ কোটি ৫৯ লাখ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়।

এই বিপুল ঋণের বিপরীতে নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষিত হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৭০১ কোটি ১০ লাখ টাকা। ফলে, প্রকৃত ঝুঁকি বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি ছাড়া অব্যবস্থাপনায় রয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার সমপরিমাণ নেগেটিভ ইক্যুইটি। ২০১০ সালের ধসের পর থেকে পুঞ্জিভূত এ সমস্যাটি এখন বাজারের স্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান অন্তরায়। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথ্য-ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে আরও সক্রিয় হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।