সাড়ে পাঁচ বছর পেরুলেও চূড়ান্ত হয়নি পুঁজিবাজার বান্ধব কোম্পানি আইন
বিশেষ প্রতিবেদক : প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে বিদ্যমান কোম্পানি আইনকে সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নিলেও অদ্যাবধী তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিশ্ব ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) কোম্পানি আইনের একটি খসড়া সাড়ে তিন বছর আগে জমা দিলেও তা চূড়ান্ত করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, খসড়ায় পুঁজিবাজার রক্ষায় ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজতর করাসহ সম্প্রসারিত নতুন নতুন ব্যবসাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। খসড়া তৈরিতে দেড় কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বেশি সম্প্রসারিত হওয়ায় আর পুঁজিবাজারও কোম্পানি আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন এসব বিষয় সামাল দিতে পারছে না। বিধায় প্রণীত খসড়ায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য কোম্পানি আইনে ‘বাইব্যাক’ বা শেয়ার পুন:ক্রয়ের বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনে কোন কোম্পানি তার মোট পরিশোধিত মূলধন ও উদ্বৃত্ত তহবিলের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার বাইব্যাক করতে পারবে না। তবে এক আর্থিক বছরে ওই বছরের মোট পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি বাইব্যাক করতে পারবে না। এছাড়া এ ধারার কোন বিধান লঙ্ঘন করলে ওই কোম্পানি দোষী সাব্যস্ত হবে এবং ৫ লাখ টাকা আর্থিক দন্ডে দন্ডিত হবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে বাইব্যাক পদ্ধতি সম্পন্ন করতে হবে। বাইব্যাক সম্পন্ন করার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ক্রয়কৃত সিকিউরিটিজ বাতিল বা ধ্বংস করে ফেলতে হবে। নতুন এ আইনে মনোনীত পরিচালকদের শেয়ার কেনার অযোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছে। একক মালিকানাধীন বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য এজিএম না করার বিধান থাকছে এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনিয়ম হলে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কোম্পানি আইনে আদালতের সম্পৃক্ততা যতটা সম্ভব কমানো হচ্ছে। আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ ও ফার্মসকে (আরজেএসসি)।
এ ছাড়া খসড়ায় একক মালিকানাধীন কোম্পানিকে এ আইনের আওতায় আনা, পরিচালকদের দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণ, অনুমোদিত মূলধনের সুযোগ না রাখা, লভ্যাংশ পরিশোধে বিধি-নিষেধ আরোপ,কোনো ধরনের আপত্তি না জানানোর বিধান রাখা ও বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রও স্পষ্ট করা হচ্ছে। খসড়ায় অনিয়মের দায়ে নিরীক্ষকের লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদ-ের বিধানসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রেখে করপোরেট গভর্নেন্স বা কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নতুন কোম্পানি আইনের একটি খসড়া তৈরি করতে ২০১১ সালের জুলাই মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মো. গোলাম হোসেনকে প্রধান করে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। এরপর আইএফসি’র সহায়তায় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ফান্ড এ আইনের খসড়া তৈরি করেছে। এ জন্য কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিব-উল আলমকে প্রধান কনসালটেন্ট নিয়োগ করে সংস্থাটি। এর বাইরে কানাডার সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৯ বছর কাজ করা রিচার্ড শ’সহ দেশি-বিদেশি আরো কয়েকজন কনসালটেন্ট কাজ করেছেন। আইএফসি একটি খসড়া ২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসের ২য় সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাছে জমা দেয়।
আইএফসি’র একটি সূত্র জানিয়েছেন, সরকারের ঈস্খথম মেয়াদের শেষ দিকে খসড়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়া হলেও ২য় মেয়াদের ক্ষমতায় আসার পর এ ব্যাপারে তেমন কোন সাড়া না থাকায় এটি ঝুলে আছে। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আন্তরিক হলেই এটি মন্ত্রি পরিষদ সভায় অনুমোদনের পর তা চূড়ান্ত করা হবে বলে তিনি জানান।