অতিমূল্যায়িত ইস্টার্ন কেবলস!
বিশেষ প্রতিবেদক: উত্থান-পতনই পুঁজিবাজারের ধর্ম। আবার এ বাজারে বিনিয়োগে মুনাফার পাশাপাশি লোকসান হবে- এটাও স্বাভাবিক। সমগ্র বিশ্বে পুঁজিবাজারের বড় বড় খেলোয়াররাও লোকসান গুনেছেন। তবে এ হার অনেক কম। এর কারণ হচ্ছে পর্যবেক্ষণকেন্দ্রিক বিনিয়োগ। বরাবরই বলা হয়ে থাকে পর্যবেক্ষনই বিনিয়োগের পূর্বশর্ত। সাধারণত যেকোন কোম্পানির ৪-৫টি বিষয় নজরে আনলে মোটামুটি ৮০ শতাংশ ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। এরমধ্যে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত (পি/ই রেশিও) অন্যতম। আর কোন শেয়ারের পি/ই রেশিও যত কম হয়, সে বিনিয়োগ ঝুঁকি ততটাই কম। আর পিই রেশিও যত বেশি, সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিও তত বেশি। কোনো কোম্পানির সর্বোচ্চ পিই সর্বোচ্চ ৪০ পয়েন্টের ঘরে থাকলে তাকে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে ধরে নেয়া হয়।
তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশীয় পয়েন্টকে নিরাপদ বলে মনে করেন। আর ৪০’র ওপরে ওঠে আসলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকে অনিরাপদ কিংবা ওই কোম্পানির শেয়ার দর অতিমূল্যায়িত বলে মত প্রকাশ করেন। যে কারণে মার্চেন্ট ব্যাংক ও হাউজগুলোকেও চল্লিশোর্ধ্ব পিইধারী কোম্পানিতে মার্জিন ঋণ প্রদানে নিষেধারোপ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এক্ষেত্রে ইস্টার্ন কেবলসের শেয়ার দর অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে। কোম্পানিটির পিই বর্তমানে ১৬৮২.৫০ শতাংশীয় পয়েন্টে অবস্থান করছে। যা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানা গেছে, ‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটি ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর পরিশোধিত মূলধন ২৪ কোটি টাকা ও রিজার্ভের পরিমাণ ৪৯ কোটি ২ লাখ টাকা। সর্বশেষ অর্ধবার্ষিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ০.৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সদ্য সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটি সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে।
আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বশেষ ১৩৪.৪০ টাকা থেকে ১৩৬.৭০ টাকায় ওঠানামা করেছে। এছাড়া গত এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১০২ টাকা থেকে ২০৪ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে।
গত কয়েক বছরে কোম্পানিটির ইপিএসের তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে। ২০১৩ সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটির ইপিএস ৬.১০ টাকা হলেও ২০১৬ সমাপ্ত বছরে তা ১.৩৫ টাকায় নেমে এসেছে।
কোম্পানিটির ২ কোটি ৪০ লাখ শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ৪.৬৪ শতাংশ, সরকারের হাতে ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭.৬৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৬.৭১ শতাংশ রয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কোম্পানির আর্থিক অবস্থা যতই ভালো হোক না কেন, নিয়মানুযায়ী কোনো শেয়ারের পিই ৪০’র ওপরে ওঠে গেলে সেই শেয়ার অতিমূল্যায়িত কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়। যে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের মতে ৪০ নয়, বরং কোনো কোম্পানির শেয়ার দর ২০’র ওপরে চলে গেলেই সেই শেয়ার ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে কারণে এসব কোম্পানি থেকে সরে আসা উত্তম। আর ২০’র নিচে থাকা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ তুলনামুলক নিরাপদ। তবে তা ৪০’র ওপরে চলে গেলে সেখানে বিনিয়োগ ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। যে কারণে মার্চেন্ট ব্যাংক ও হাউজগুলোকেও চল্লিশোর্ধ্ব পিইধারী কোম্পানিতে মার্জিন ঋণ প্রদানে নিষেধারোপ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই না বুঝে অন্যের কথায় শেয়ার কেনাবেচা করেন। ফলে তারা প্রতিষ্ঠানের মৌলভিত্তির কথা ভুলে যান। ফলে এক সময় তাদের চরম মূল্যও দিতে হয়। যেসব শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত কম, সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজের পুঁজির নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের সচেতন হওয়া দরকার।