পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে জনতা ও সিটি ব্যাংক
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট কাটাতে ব্যাংক ও মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠন করা তহবিল থেকে সরকারি ও বেসরকারি দুই ব্যাংক ঋণ নিয়েছে। সম্প্রতি জনতা ও সিটি ব্যাংক ওই তহবিল থেকে ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেখান থেকে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিতে পারবে।
তফসিলি ব্যাংকগুলো এই তহবিল পাঁচ বছর ব্যবহার করতে পারবে। পুঁজিবাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি উন্নয়ন ও বাজার মধ্যস্থতাকারীদের তারল্য সহায়তার অংশ হিসেবে এ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।তহবিলের অর্থ শুধু পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার জারির পর ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরই মধ্যে জনতা ও সিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য টাকা নিয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর আজ পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু হচ্ছে। করোনার প্রভাবে চলতি বছরের মার্চে মাত্র ১৩ কার্যদিবসের দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচকটি ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট হারায়।
যদিও ১৯ মার্চ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে সূচকটি এক দিনেই ১০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়। তারপরও সূচকটি ৪০০৮ পয়েন্টে রয়েছে। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বিশেষ করে ব্যাংকগুলো নিষ্ক্রিয় থাকায় পুঁজিবাজারে ক্রেতাসংকট তৈরি হয়। তবে সরকারের অনুরোধে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের আশ^াস দিলেও তারল্য সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে তারল্য জোগানে বিশেষ তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠন করা তহবিল বিষয়ে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, তফসিলি ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস অথবা ধারণকৃত ট্রেজারি বিল অথবা বন্ড রেপোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারবে। এ তহবিল থেকে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে। এ সুবিধা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। এক্ষেত্রে রেপোর সুদহার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং কোনো নিলামের প্রয়োজন হবে না।
অবশ্য ট্রেজারি বিল ও বন্ডের রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুসারে সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদি রেপো প্রদান করা হবে, যা ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পুনঃনবায়নের সুবিধা থাকবে।
ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিবেচনা ও সুবিধা অনুসারে তহবিল ব্যবহার করতে পারবে। তবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও পুঁজিবাজারের সার্বিক স্বার্থে ওই তহবিলের ন্যূনতম ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে ও ১০ শতাংশ স্পেশাল পার্পাস ফান্ডের মাধ্যমে স্বীকৃত কোনো সম্পদের বিপরীতে ইস্যুকৃত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে।
কোনো তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক গঠন করা তহবিলের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ব্যবহার করতে পারবে। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য ঋণ হিসেবে তহবিলের ২০ শতাংশ দেওয়া যাবে।
অন্য ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউজের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিওর জন্য ৩০ শতাংশ ও অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য তহবিলের ১০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেওয়া যাবে।
এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক, তার সাবসিডিয়ারি ও অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের নিজস্ব পোর্টফোলিও গঠনের জন্য পৃথক বিও (বেনিফিসিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলতে হবে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উক্ত পোর্টফোলিওর বাজারভিত্তিক পুনঃমূল্যায়ন বন্ধ থাকবে। তবে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করতে হবে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত তহবিল থেকে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। ঋণসীমার সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। অন্যান্য তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সাবসিডিয়ারি এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজকে দেওয়া ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ও মেয়াদ একই থাকবে। তবে ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে বিও হিসাবের সমুদয় সিকিউরিটিজের স্থিতি ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।